ছেড়া পাতা
লিখেছেন লিখেছেন অগ্রহায়ণ ২৭ জুলাই, ২০১৫, ০৭:৪৮:২৫ সন্ধ্যা
বাইকে বসে কয়েকবার হর্ন বাজালাম। এক মিনিট দুই মিনিট। নাহ, লোহার দরজার ওপাশ থেকে কারো আসার নাম গন্ধও পেলাম না।
পিছনে বসা ফুফাতো ভাইকে আবার জিজ্ঞাস করলাম, তুই ঠিক জানিস তো এই বাড়ি কি না? সে বলল, অনেক আগে এসেছিলাম। তবে এটা নিশ্চিত যে বাড়ি এটাই।
ওর কথা শুনে বিরক্তি আরো বাড়ল। বিয়ের সময় এত লতা পেছানো আত্মীয় খুজে খুজে দাওয়াত দেবার কি দরকার বুঝি না। যারা বিয়ে করবে তাদের কজন মুরব্বি ডেকে "কবুল কবুল কবুল " পড়ে সংসার শুরু করে দেবে। ব্যাসস মামলা ডিসমিস।
বিরক্তির পাহাড় নিয়ে নেমে এসে দরজার হাতলে চাপ দিলাম। ভিতর থেকে লক করা নেই। বাইকে বসা ফুফাতো ভাই কে ডাক দিলাম, "চল ভিতরে ঢুকি। "
বাইক নিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে পাকা উঠানে দাঁড়ালাম। সারা উঠানে পাকা ধান বিছানো। ঘরে প্রবেশের সিঁড়ি পথে এক বৃদ্ধা বাঁশের কঞ্চি হতে বসে আছে। আর একটু পর পর "হিস হিস হিস" করে আওয়াজ দিচ্ছে। দেখে মনে হল হাস মুরগী দৌড়ানোর মহান দায়িত্ব পড়েছে এই বৃদ্ধার উপর।
আমরা কাছে গিয়ে সালাম দিলাম। সালামের উত্তর দিয়ে বৃদ্ধা জানতে চাইলেন, তোমরা কারা?
আমি নিজের পরিচয় দেওয়ার আগে আমার আব্বুর পরিচয় দিলাম। সাথে ফুফাতো ভাইকেও পরিচয় করিয়ে বললাম, আগামী সপ্তাহে আমার ছোট চাচার বিয়ে। আপনাদের দাওয়াত দিতে এসেছি।
বৃদ্ধার মুখ হাসিতে ভরে গেল। খুশি তে গদ গদ হয়ে বললেন, কার বিয়ে? শাহেদের নাকি সাইদের?
আমি বললাম, সাইদের। শাহেদ চাচার বিয়ে তো আগেই হয়েছে।
বৃদ্ধা বললেন, ওহ। আচ্ছা চল ঘরে এসে বসো তোমরা।
আমরা পিছন থেকে বৃদ্ধা কে অনুসরণ করলাম। ড্রয়িংরুমে ঢুকে বৃদ্ধা চেঁচাতে লাগল, নীলুউউউ.....অ নীলুফা। মেহমান আসছে। নাস্তা পানি দে।
আমাদের চেয়ারে বসতে দিয়ে তিনি আমাদের সামনে মোড়া পেতে বসলেন।
অন্য বৃদ্ধরা যেমন হয়, তিনি ও ঠিক তেমনি। দুই মিনিটেই রাজ্যের গল্প জুড়ে দিলেন আমাদের সাথে। যেন আমাদের সাথে তার কত সখ্যতা।
"বুঝছো....চোখে ছানি পড়ছে। কিছুই দেখি না। বয়স হইছে না। এখন খালি ঝাপসা দেখি..... "
গল্পের মাঝখানে আবার চেঁচিয়ে উঠে, নীলুউউউ....অ নীলু। অহ নীলুফার ইয়াসমিন। কই গেলি?
আবার শুরু করেন তিনি। "নীলুফার আব্বা শহরে থাকে। তার মা গেছে বিদ্যুৎ অফিসে বিল জমা দিতে।
ঘরে একটা ছেলে পুলা নাই। একটা ছেলে থাকলে কত কামে লাগে। "
ঠিক তখন নাস্তার ট্রে হাতে নিয়ে এল ষোড়শী এক মেয়ে। মুহুর্তে আমার চোখ আটকে গেল সেদিকে। মেয়েটি কাছে এসে আমাদের সামনে শরবতে গ্লাস এগিয়ে দিল। নোনতা বিস্কিটের প্লেট নামিয়ে রাখার সময় একবার তাকাল আমার চোখে চোখে।
তখনো আমি চেয়েই আছি অপলক তার দিকে। মানুষও এমন সুন্দর হয়। মনে হচ্ছে কল্পনায় ভাসছি। এমন নিখুত অবয়ব। কি শান্ত মুখশ্রী। প্রস্ফুটিত চোখ দুটো।
পাশে বসা ফুফাতো ভাই পা দিয়ে গুতা দিল আমাকে। ফিসফিসিয়ে বলল, কি দাদা শক খাইলা মনে হয়।
গলা নামিয়ে বললাম, শক না রে গাধা। একদম জ্বলে পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছি।
মোড়া তে বসে থাকা বৃদ্ধা মনে হয় আমাদের অবস্থা কিছুটা আচ করতে পেরেছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে তিনিই আবার গল্প শুরু করলেন। "বিয়ে কোথায় হচ্ছে। মেয়ে কি করে। স্বর্ণ কত ভরি।......
ফুফাতো ভাই তার জবাব দিচ্ছে হু হা করে। আমার চোখে তখনো ভাসছে সেই নিঃপাপ চাহনি। আহা! কি নাম যেন তার। ওহ হ্যা নীলুফা... নীলু.... বাহহ কি কিউট নাম। তবে নামের চেয়ে মানুষ শতগুন কিঊট।
ফুফাতো ভাই বলল, দাদা এবার চলো যাওয়া যাক। আরো অনেক বাড়ি দাওয়াত দেয়ার বাকি আছে। নাকি তোমার আরো এক গ্লাস শরবত খাওয়ার প্লান আছে।
আমি বললাম, নাহ রে। এখন আর শরবত দিয়ে তৃষ্ণা মিটবে না। চল যাই।
বিদায় নেবার সময় আমরা সেই বৃদ্ধাকে বিয়ে তে যাওয়ার জন্য জোর প্রয়াস চালালাম। এই আশায় হয়ত সবার সাথে সেই কন্যা কুমারী ও এটেন্ড করবে। তখন হয়ত আবার দেখা পাবো।
উঠানে এসে বাইক চালু করে একটু এদিক সেদিক উকি দিলাম। যদি একটু চোখের দেখা পাওয়া যায়।
নাহহ, আশেপাশে নাই। কোথায় লুকিয়ে আছে কে জানে।
বাইক নিয়ে লোহার দরজা পেরুনোর সময় ব্যাক ভিউ মিররে দেখলাম বাড়ির ছাদে কে যেন দাঁড়িয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
হ্যা এই তো সেই। নীলুফার। নীলু।
আমি পিছনে না ফিরে হাত তুলে নাড়ালাম।ব্যাক গ্লাসে দেখলাম সেও হাত নাড়াচ্ছে। আমার অজান্তেই মুখে হাসি ফুটে উঠল। বুক থেকে যেন পাথর নেমে গেছে।
রাস্তায় চলার সময় ফুফাতো ভাই বলল, আচ্ছা দাদা, আল্লাহ মেয়েদের পিঠে ডানা দেন নাই কেন বলোতো?
আমি চেহেরায় নকল বিরক্তি ফুটিয়ে বললাম, চুপ কর গাধা। আর পন্ডিতি দেখাতে হবে না.......
বিষয়: বিবিধ
১৩৫৮ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এক্কেরে জায়গা মত!
মন্তব্য করতে লগইন করুন