গল্প নয়, সত্যি
লিখেছেন লিখেছেন অগ্রহায়ণ ০৭ জুলাই, ২০১৫, ০৫:৪৪:০৯ বিকাল
"সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছে" - বলে একটা কথা আছে আমাদের সমাজে।
আজ তোমাকে তেমন একজনের সত্যিকার কাহিনী শুনাবো। শুনাবো তার শেষ পরিনতি।
সে জন্মেছিল শহরের বিখ্যাত ধনী পরিবারে। অভাব অনটন ক্ষুধা কষ্ট এসব কি জিনিষ কোনদিন সে বুঝেনি।
শিশুকাল থেকেই বিলাসী জীবন যাপন করতে পছন্দ করতেন। আর যৌবনে এসে তার পুর্নতা পেল। গায়ে জড়াতেন রেশমের কাপড়। আর মাখতেন খুশবুদার আতর।
সে কোন রাস্তা দিয়ে গেলে লোকজন না দেখেই বলে দিতে পারত, হ্যা অমুক যাচ্ছে। কিন্তু তাই বলে তার মনে অহংকার ছিল না। সবার সাথে মিশতেন অমায়িক ভাবে।
কিন্তু একসময় হাওয়া উলটা বইতে শুরু করল। শহরে তার বন্ধুর চেয়ে শত্রুর সংখ্যা ধেই ধেই করে বেড়ে গেল।
এমনকি তার পরিবারের সদস্যরাও তার বিরুদ্ধে চলে গেল।
কেড়ে নিল অর্থ-সম্পদ। কেড়ে নিল বাসস্থান। এমনকি পরনের জামা কাপড়।
এক দুপুরে শত্রু পক্ষের কয়েকজন তাকে ধরে নিয়ে গেল। উত্তপ্ত রোদে তাকে গাছের সাথে বেধে পিঠাতে লাগল ইচ্ছে মত। যেন কোন বিষাক্ত সাপ পিঠাচ্ছে।
সারাদিন অত্যাচারের পর রাতে ক্ষান্ত দিল শত্রুপক্ষ। সেই সুযোগ কাজে লাগালেন তিনি।
পালিয়ে গেলেন।
সেই স্থান ছেড়ে।
সেই শহর ছেড়ে।
নিজে পরিবার ছেড়ে।
অন্য দেশে, অন্য শহরে। যেখানে তার মত লোকের সংখ্যা অতি নগন্য হলেও, নিরাপত্তা পাবেন।
- তারপর কি হলো ?
তারপর কি হলো বলছি শোন।
সেই শহরে বসে বসে তিনি প্রিয় মাতৃভুমির কথা ভাবতেন। সেই সোনালী শৈশবের কথা ভাবতেন।
আর বেশী ভাবতেন, যে নেতার জন্য তিনি এত কষ্ট সহ্য করতেছেন। যার জন্য অর্থ বিত্ত ছেড়েছেন, বাড়িঘর ছেড়েছেন, পরিবার পরিজন ছেড়ে অন্য দেশে চলে এসেছেন - সেই মহান নেতার কথা।
আর অপেক্ষা করতেন, কখন সেই প্রিয় মানুষটি কবে নিজের কাছে ডেকে নিবেন।
অবশেষে এই ডাক এলো। তিনি জীর্ন শীর্ন পোষাকে হাজির হলেন নেতার কাছে। বুক ভরে নিশ্বাস নিতে পেরে তার মন ভরে উঠলো। কারন এখানে সবাই তার মত। সবাই ভাই ভাই।।
কিছুদিন পর সেই মহান নেতা যুদ্ধের ঘোষণা দিলেন। হ্যা যুদ্ধ। সেই সব জালিমদের বিরুদ্ধে যারা তাদের নিজের স্বার্থে অত্যাচার করেছে। সেই সব নরপিশাচের বিরুদ্ধে যারা নিজ শহর থেকে বিতাড়িত করেছে নিরীহ মানুষদের।
শুরু হল ন্যায় আর অন্যায়ের লড়াই। প্রিয় নেতার আদেশে তিনি হলেন পতাকাবাহী।
বুক ফুলিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সত্যের পতাকা। চারদিকে তরবারির ঝনঝনানি। রক্তের স্রোত।
একসময় তার ডান হাত তরবারির আঘাতে কাটা পড়ল। তিনি বাম হাতে পতাকা ধরলেন।
এবার শত্রুপক্ষের তরবারি কেড়ে নিল তার বাম হাত ও। তিনি অবশিষ্ট বাহু দিয়ে উচু করে ধরলেন ঝাণ্ডা।
কিন্তু একটা তীর এসে তার বুক এপোড় ওপোড় করে দিল। লুঠিয়ে পড়লেন তিনি।
যুদ্ধ শেষ হলো।
শহীদের পবিত্র দেহ একে একে কবরে শুইয়ে দিচ্ছেন মহান নেতা।
সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম নেয়া সে লোকের কাফন পরাতে এসে দেখা গেল, সব কাপড় শেষ হয়ে গেছে। আছে মাত্র এক টুকরা।
সেই কাপড়ে তার মুখ ডাকতে গেলে পা উন্মুক্ত হয়ে যায়। পা ডাকতে গেলে মুখ বেরিয়ে আসে।
এ অবস্থা দেখে প্রিয় নেতা ডুকরে কেদে ফেললেন। তার চোখে ভেসে উঠল সেই সব দিনের ছবি। এই সেই লোক, যার আতরের খুশবু নিয়ে লোকেরা কথা চালাচালি করত। যার রেশমি কাপড় ছিল সব চেয়ে উচু দরের।
আজ তার জন্য কাফনের কাপড়টাও ভাল মত জুঠলো না।
*
*
আরে বোকা মেয়ে, তুমি কাঁদছ কেন। তুমি সেই সব মানুষের পরিচয় পেলে তোমার চোখ দিয়ে কান্না নয়, বের হবে ঈমান দ্বীপ্ত আলোক দ্যুতি।
তুমি কী জানো কে সেই লোক। তার নাম হযরত মুসয়াব রাঃ। আর সেই মহান নেতা - তিনি আমাদের প্রিয় রাসুল হযরত মুহাম্মদ সঃ। আমাদের আদর্শ।
বিষয়: বিবিধ
১৪৮৫ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
গল্প নয়, সত্যি। জাজাকাল্লাহু খাইরান।
মন্তব্য করতে লগইন করুন