লটারি
লিখেছেন লিখেছেন অগ্রহায়ণ ২২ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১১:১৬:০৫ রাত
"জবাই করে দে কুত্তাটারে.... মার শালা মালুর বাচ্চা মালুরে.... মার মার..... "- বলতে বলতে কয়েকজন লাথি ঘুসি মারতে লাগল সন্দীপ কে।
মারতে মারতে নাকে মুখে রক্ত গড়িয়ে পড়ল তার।
সন্দীপ কাদো কাদো হয়ে বলল, ভাই আমারে মাফ করে দেন ভাই। আমারে মাইরেন না ভাই।
"....আচ্ছা মারমু না। আগে টাকা বের কর। দে টাকা দে হারামি। " "টাকা দিলে মাইর না চুম্মা দিমু...... খিক...খিক"
সন্দীপ ওদের হাতে পায়ে ধরে বুঝাতে লাগল, বিশ্বাস করেন ভাই। আমার কাছে টাকা নাই। অনেক কষ্ট করে টিকিটের টাকা জমাইছি।
"অই কি দেখস। হালা মালু এভাবে টাকা দিতো না। মাটিতে ফালা কুত্তা রে। জবাই করি দিমু.. আমেরিকা না, ডাইরেক্ট উপরে পাটাই দিমু ... কাফের মারা সওয়াবের কাম..."--বলতে বলতে দুজন ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল সন্দীপ কে। অন্যজন এসে ছুরি বসিয়ে দিল তার গলায়.....।
[[ আজকাল অনেক খুটি নাটি বিষয় নিয়ে লিখি। কিন্তু সন্দীপের কথা কি করে এত দিন ভুলে ছিলাম। আশ্চর্য্য। আজ সে সন্দীপের কথা বলি ]]
সন্দীপ আমার কলেজ জীবনের বন্ধু ছিল। অনেক সহজ সরল। নম্র স্বভাবের, যে কেউ ওর সাথে মিশলে পছন্দ না করে পারে না।
ওর বাবা মারা গিয়েছিল ছোট কালেই। মা অনেক ত্যাগ স্বীকার করে তাকে মানুষ করেছে।
লেখা পড়ার খরচ চালাতে অনেক গুলা টিউশনি করতে হত তার। তারপরেও তার মুখে সবসময় হাসি লেগেই থাকত।
কলেজ থেকে বের হয়ে একেকজন একেক দিকে হারিয়ে গেলাম জীবন স্রোতে।
তার অনেক বছর পর হঠাৎ একদিন সন্দীপ আমার অফিসে হাজির। ওকে পেয়ে আমি যেমন খুশি হলাম। তেমন অবাক হয়েছিলাম। পুরানো দুই দোস্ত মিলে চা খেতে খেতে আড্ডা জমিয়ে দিলাম।
সন্দীপ জানালো, সে আমেরিকার ডিবি লটারি পেয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে সামনের মাসেই উড়াল দেবে।
আমি জানতে চাইলাম, টাকা পয়সা আছে তো?
সে হেসে বলল, নাহ রে দোস্ত। এর কাছে ওর কাছে হাত পাতছি নির্লজ্জের মত। তাই বলে ভাবিস না যে তোর কাছেও টাকার জন্য এসেছি। তোর কাছে স্রেপ বিদায় নিতে এসেছি।
সন্দীপের অই বিদায় যে আসলেই শেষ হবে একবারও চিন্তা করতে পারিনি।
সপ্তাহ খানেক পর একদিন সারা মহল্লায় কানাঘুষা হতে লাগল, সন্দীপকে মাস্তানরা ২ লাখ টাকার জন্য জবাই করেছে।
আমি বিশ্বাস করিনি তখনো এমন ছেলেকে কেউ টাকার জন্য মেরে ফেলবে।
আসল খবর নিতে পাশের গ্রামে ওর বাড়ি যাবার সিদ্বান্ত নিলাম।
ওদের বাড়ির উঠার পর আমি পুরা শকড হয়ে গেলাম। সন্দীপ কে একটা সাদা কাপড়ে জড়িয়ে রাখা হয়েছে। কাপড়ের জায়গায় জায়গায় রক্তের দাগ।
এত বড় ঘটনা, অথচ কোন শোরগোল নাই। আশে পাশে কিছু মহিলা জড়ো হয়েছে। তাদের মুখে কাপড় ধরে রেখেছে এক হাতে।
বাড়ির পুরুষের যার যার ঘরের দরজার সামনে হতাশ হয়ে বসে আছে।
চারপাশের পরিবেশটাও কেমন চুপসে আছে।
সুর্যটাও কেমন নিরুত্তাপ। পাশের কোন গাছে বসে কয়েকটা কাক কর্কশ গলায় ডাকল কয়েকবার।
আমি অবাক হয়ে খেয়াল করলাম, আমার চোখের কোনা দিয়ে অদ্ভুত রংয়ের পানি গড়িয়ে পড়ল।।
বিষয়: সাহিত্য
২০৩৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কিন্তু এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে আমাদের চারপাশে
মন্তব্য করতে লগইন করুন