এতোদিন কোথায় ছিলেন?
লিখেছেন লিখেছেন অগ্রহায়ণ ০২ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১২:০৬:৩৪ দুপুর
কতদিন হবে?
কম করে হলেও চারটি বছর।
বড় আপুর বিয়ের অনুষ্টানে প্রিয়ংকা কে দেখে চিনতে দেরি হয়নি একটুও।
মেয়েদের দলের মধ্যে শুধু তার দিকেই বেহায়া চোখ চলে যাচ্ছিল বারবার। একবার চোখ পড়লেই তাকিয়ে থাকতাম কয়েক মুহুর্ত। ভীত চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে সরে যেতাম পরক্ষনেই। পাছে কেউ ঠের পেয়ে যায়।
সেবার ঝাকিয়ে শীত পড়েছিল। আর সে রাজশাহী সিল্কের উপর জড়িয়েছিল কাশ্মিরী চাদর।
ওর পোষাকে চেহেরা অবয়বে যে প্রখর ব্যাক্তিত্ব ফুটে উঠছিল তার সামনে নিজেকে বড় তুচ্ছ মনে হচ্ছিল আমার। ঠিক আগের মত।
ইস্কুলের বারান্দায়, কেন্টিনে অথবা বিকালে খেলার মাঠের পাশ দিয়ে যখন ও বান্ধবীদের সাথে গল্প করতে করতে হেটে যেত, আমি অপরাধী বালকের মত একবার তাকিয়ে চোখ নিচু করে ফেলতাম।
বুকের ভিতর প্রান স্পন্দন এতই বেড়ে যেত যে, ধক ধক আওয়াজ আমি নিজের কানেই শুনতে পেতাম।
কারো মুখে প্রিয়ংকার নাম টা শুনলেই কানে ভিতর ঝা ঝা করত।
কোন প্রয়োজনে যদি কখনো কিছু চাইতে যেতাম, গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যেত।
মনে মনে ভাবতাম, মেয়েদের মুখ এত ফর্সা হয় কেমনে। মুখে একটা দাগ ও নেই। কিশোর মনে চিন্তা গুলো মনে পড়লে নিজের মনেই হাসি পায়।
অনেক্ষন হল ওকে দেখছিনা।
মেহমানদের খাদেমদারি করতে করতে প্রিয়ংকা কোথায় লুকিয়েছে খেয়ালই করিনি।
এরুম ওরুমে উকি ঝুকি মারলাম কৌশলে।
একবার দৌড়ে ছাদেও গেলাম।
নাহ, কোথাও পেলাম না। মনের ভেতর ওকে দেখার আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে।
ছাদ থেকে নিচে নেমে উঠানের এক কোনায় দেখি আমার আম্মু প্রিয়ংকার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।
ওদের একসাথে দেখে আমি ঝট করে মানে মানে কেটে পরতে চাইলাম। ওমনি পিছন থেকে আম্মু ডাক দিলেন- এই অগ্র, এদিকে শুনে যা।
আমি কাছে গিয়ে বললাম, কি হয়েছে আম্মু? কিছু লাগবে নাকি?
আম্মু বলল, যা তো প্রিয়ংকা কে একটু ওদের বাড়ীতে পৌছেঁ দিয়ে আয়। এত রাতে একা যেতে পারবেনা।
আম্মুর কথা শুনে আমি হতবুদ্ধি হয়ে গেলাম। বোকার মত মাথাটা শুধু একবার ডানদিকে কাত করলাম।
ঘোরের মধ্যে হাটছিলাম প্রিয়ংকার পাশে। মনে হচ্ছিল এখনি ঘোর কেটে যাবে। দেখা যাবে আমি একা একাই রাস্তাই হাটছি।
বেশ ঘন কুয়াশা পড়ছিল তখন। দুহাত সামনে কি আছে বুঝা যাচ্ছিল না।
হাতের মুবাইল ই ভরষা।
ধীরে ধীরে হাটতে হাটতে প্রায় ওদের বাড়ীর কাছাকাছি এসে গিয়েছিলাম।
হঠাৎ প্রিয়ংকা জিজ্ঞাস করল- একটা প্রশ্ন করি। সত্যি করে জবাব দেবে তো?
আমি মনে মনে ভাবলাম আজকালের মেয়েরা অনেক এগ্রেসিভ। এত বছর পর দেখা। অথচ কোন জড়তা নেই। সরাসরি জবাব চাইচে। সাহস কম নয়।
আমি বললাম- হুম দেব।
সে বলল- তুমি কি কাউকে ভালবাসো?
ওর কথা শুনে আমার কৌশরের আবেগ হঠাৎ ফিরে আসল। আমার অবচেতন মন ভেতর থেকে আমাকে তাগড়া দিচ্ছে, বলে দে বল দে।
একটু পর কাপাঁ কাপাঁ গলায় বলেই দিলাম - তোমাকে ।
সে থমকে গেল। দাড়িয়ে গেলাম আমিও।
কয়েক মুহুর্ত ও ওভাবেই দাড়িয়ে রইল মাথা নিচু করে।
মুবাইলের হালকা আলো ফেললাম ওর মুখের উপর। দেখলাম ওর চোখে পানি চিক চিক করছে।
নিজেকে অপরাধী মনে হল। বললাম - সরি। মুখ ফস্কে বলে.......
আমার কথা শেষ করার আগেই প্রিয়ংকা ঝাপটে আমাকে জড়িয়ে ধরল।
ঘটনা এতটাই আকস্মিক ছিল যে, মনে হল এখুনি জ্ঞান হারাবো।
আমি বললাম - কি হচ্ছে প্রিয়ংকা?
সে কিছুই না বলে আরো বেশী করে জড়িয়ে ধরল শিশুর মতন।
আমিই আবার বললাম - তুমিও কি আমাকে ভালবাসো?
সে ফুফাতে ফুফাতে বলল - হুম, তুমি বোঝ না।
আমি ইষৎ হেসে বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে এবার ছাড় তো। কান্না করে আমার শার্ট ভিজিয়ে দিলে তো।
সে বলল - ভিজুক।
আমি বললাম - আরে পাগলি, কেউ দেখে ফেললে কি ভাববে বল তো।
সে বলল - দেখুক। যার যা ইচ্ছে ভাবুক। আমি তোমাকে ছাড়ব না। সেই কবে থেকে শুধু তোমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে ভালবেসে এসেছি। তুমি তো উল্লু কিছুই বোঝনা। আর তোমাকে ছাড়বো না।
আমি বললাম - আচ্ছা ধরে রাখ। আর কোনদিন ছেড়ো না।
বিষয়: সাহিত্য
১১২২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অগ্রের আগ্রহ প্রিয়াংকা আর প্রিয়াংকার প্রিয় অগ্র । তাই অগ্র পশ্চাত না দেখে চালা'য় যাও ।
আর এই গল্পকে শফিক রেহমানের মৌচাকে ঢিল হিসেবে পাঠিয়ে দিন ।
আসলেই কি এরকম হয়?
ভাল হয়েছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন