অধরা সুখ
লিখেছেন লিখেছেন অগ্রহায়ণ ২৯ নভেম্বর, ২০১৪, ০২:২৩:১১ দুপুর
রানু.....এই রানু...। ডাকতে ডাকতে আবারো দরজায় কড়া নাড়ালো রফিক।
রানুর ঘুমে ভেঙ্গেছে প্রথম ডাকেই। বিছানায় উঠে বসে তার ভয় ভয় করছিল। এই ঝড় বাদলার রাতে কে ডাকছে। ও তো কখনো এত রাতে বাড়ি ফিরে না।
রানু হারিকেন জ্বালিয়ে ধীরে ধীরে দরজার সামনে গিয়ে বলল, কে ওখানে?
রফিক বলল, দরজা খোল রানু। আমি।
রানু দরজা খুলে দেখল রফিক বৃষ্টি তে ভিজে থর থর করে কাপছে।
রফিক ঘরের মধ্যে প্রবেশ করতেই রানু একটি তোয়েলে আর লুঙ্গি নিয়ে আসল।
সে বলল, তুমি লুঙ্গি টা পাল্টায়া আস আমি তোমার মাথা মুছে দিচ্ছি।
রানু মাথা মুছতে মুছতে রফিকের লম্বা চুলগুলো টেনে দিচ্ছিল আর মনে মনে নিজেকে গালি দিচ্ছিল। আহা লোকটা ভিজে পুড়ে বাইরে দাড়িয়ে আছে আর সে কিনা ইচ্ছে করে বিছানায় বসে ছিল।
- গরম পানি করে দেই। গোসল করবা? বলল রানু।
- হুম দেও। বলল রফিক।
রানু লাকড়ির চুলায় আগুন জ্বালাল। একপাশে পানি গরম করতে দিয়ে অন্য পাশে চারটা ভাত ছড়িয়ে দিল সে। তরকারি গুলো ও গরম করতে হবে। মানুষ টা সবকিছু গরম খেতে চাই।
রফিক গোসল সেরে এসে খেতে বসল। পাশে বসে পাতে তরকারি তুলে দিতে দিতে রানু বলল, কয় দিন পর আইলা মনে আছে?
- কয় দিন? খেতে খেতে বলল রফিক।
- এগার দিন পর আইছ। থুতনির নিচে হাত ঠেকিয়ে বলল রানু। "কয় দিন থাকবা? "
- হাহাহা আরে কি কও। বৃষ্টি থামলেই রওনা দিব। ঘাটে বোট ভিড়াইছি ঝড়ের জন্য। ঝড় থামলেই আনোয়ার এসে ডাকার জন্য বলে এসেছি।
রানু হঠাৎ যেন চুপসে গেল। বুকের ভেতর চিকন ব্যাথা করে উঠল যেন। "আজ কে থেকে গেলে হয়না " রুদ্ধ কন্ঠে বলল সে।
- না না ভোরের আগেই গঞ্জে পৌছাইতে হবে। না অইলে আড়তদার আমাকে বাদ দিয়া অন্য কাউকে মাল দিয়া দিবে।
- অহ আইচ্চা।
||||||||||||||||||||||
খেয়ে দেয়ে রফিক পালংয়ে গা এলিয়ে দিল। রানু তার জন্য পানের খিলি এনে দিল।
পান মুখে দিতে দিতে রফিক বলল, কি সব পুরান কাপড় পইরা থাহ। ভালা কাপড় পরতে পার না?
- বিয়ের শাড়িটা পড়ি? মুখে হাসি টেনে বলল রানু।
- আচ্ছা পড়।
- তুমি অন্য ঘরে যাও। আমি পাল্টায়া আইসতেছি।
- কেন আমার সামনে পাল্টাইলে সমস্যা কি।
- যাও অসভ্য কোনহানকার।
- দুনিয়ার সব শরম আল্লাই কি তুমারে দিসে। বলতে বলতে উঠে গেল রফিক।
এমন সময় দরজায় কড়া নাড়লো।
রফিক জিজ্ঞাস করল, কেডা বাইরে।
- আমি আনোয়ার। রফিক ভাই দেরি হইয়া যাইতাসে। জলদি রওনা করন লাগব।
- হ হ এক মিনিট ভিতরে আইসা বস। আমরা এখনি রওনা দেব।
|||||||||||||||||||||
গায়ের কাচা রাস্তা ধরে হেটে যাচ্ছে রফিক আর আনোয়ার। রফিকের হাতে একটা তিন ব্যাটারি টর্স লাইট।
রানু হারিকেন হাতে ওদের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল, যতক্ষন টর্সের আলো দেখা যায়।
মাথায় কাপড় টেনে দিয়ে কয়েকটা সুরা পড়ল সে। তারপর একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল - আল্লার হাওলা।।
বিষয়: সাহিত্য
১০৩০ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে দেয়, কিন্তু প্রকাশ করা সম্ভব হয় না।
মন্তব্য করতে লগইন করুন