লালনের দেশে একদিন আমি ও গোবর রিজবী

লিখেছেন লিখেছেন অগ্রহায়ণ ১৯ অক্টোবর, ২০১৪, ১১:২১:০৩ রাত

একদিন ঘুম থেকে উঠে আমি ভুত হয়ে গেলাম। যথারীতি ভুতের মতো আমার মাথায় দুটো শিং গজিয়েছে। শরীরের লোম গুলা লম্বা লম্বা হয়ে গেছে।

সকাল থেকে সে বসে চিন্তা করছি, ঘটনা টা কি? আমি ভুত হলাম কি করে? অনেক সময় পেরিয়ে গেলেও কোনো কুল কিনারা পেলাম না।

দুপুর গড়িয়ে গেল। পেটে কোনো খিদে অনুভব করছি না। মাথায় কিছু ঢুকছে না কেমতে কি হলো।

সিদ্ধান্ত নিলাম বাহিরে বেরুবো। দেখি বাহিরের কি অবস্তা। রাস্তায় কতক্ষণ দাড়িয়ে আছি,কিন্তু কেউউ আমার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছেনা।

মনে মনে ভাবলাম, তাহলে কি আমি অদৃশ্য হয়ে গেছি???

সাথে সাথে আমার মনে পড়লো, ভুতের তো যেখানে ইচ্ছে যখন ইচ্ছে ঘুরে বেড়াতে পারে। কোন গাড়ী ঘোড়া লাগেনা।

এতক্ষন মনোকষ্টে থাকলেও এখন একটু প্রশান্তি অনুভব করছি। কেননা এতদিন একটা ইচ্ছে ছিল সারা বাংলাদেশ ভ্রমন করার। অর্থাভাবে পুরন হয়নি।

আজ আমাকে টেকায় কে।

যেই ভাবা সেই কাজ।

প্রথমেই চলে গেলাম ঢাকার প্রান মতিঝিলে। গিয়েই আমি টাশকি খাইলাম। এ আবার কেমন মতিঝিল? টিভি তে তো অন্যরকম দেখেছি।

শাপলাচত্বর ঠিকই আছে। কিন্তু মানুষ আর গাড়ী গুলা কেমন চেঞ্জ লাগতেছে।

সবাই কেমন যেন ঘোরের মধ্যে আছে।

আমি দ্বিধা নিয়ে চলে গেলাম সংসদ ভবন এলাকায়। অবাক হয়ে লক্ষ করলাম এখানেও একই অবস্থা।

সবাই লক্ষহীন ভাবে ঘুরা ফিরা করছে। কেউ কেউ খালি গায়ে হলুদ ধুতি পড়েছে। কেউ আবার কালো ধুতি। কারো কারো হাতে একতারা, কারো হাতে দুতারা, কিছু ইয়াং ফুলাপানের হাতে গিটার। কারো হাতে ঘন্টি, কারো হাতে ঢোল।

সবাই কিছু না কিছু বাজাচ্ছে আর আপন মনে বাউলিয়া গান গাচ্ছে।

আমি আরো অবাক হয়ে গেলাম এদের মধ্যে মহিলারাও এসেছে। তারা কেউ ব্লাউজ পরেনি। হলুদ শাড়ি পেছিয়েছে সারা শরীরে। গলায় কাটের পুতি মালা।

আমার মাথা হ্যাং হবার যোগাড়। এমনিতে ভুত হয়ে মেজাজ খারাপ। তার উপর ঢাকা শহরে একি অবস্থা।

মন খারাপ করে চলে গেলাম একটি কুড়ি দুটি পাতার দেশ সিলেটে।

গিয়ে দেখলাম বিস্তৃত চা বাগান। মন টা জুড়িয়ে গেল। কিন্তু কোন মানুষজন দেখতে পাচ্ছি না কেন।

যাউক্কা, মানুষ না থাক চা বাগান তো দেখলাম।

আচ্ছা শাহ জালালের কবর ঘুরে আসলে কেমন হয়? উড়াল দিলাম সেখানে। কিন্তু সেখানে পৌছে আমার তো চক্ষু কপালে উঠার যোগাড়।

কারন এখানে ঢাকার চেয়ে ভয়াবহ অবস্থা। হাজার হাজার মানুষ বাউল সেজেছে। একতারা দুতারা বাজিয়ে গান গাচ্ছে । মনে হচ্ছে এটাই যেন জীবনের একমাত্র লক্ষ। মাজারের চারপাশে ধুপ জ্বলছে। জলছে আগরবাতি।

নারি পুরুষ মিলেমিশে একাকার। দুনিয়ার কোন দিকে কোন ধ্যান নাই কারো।

আমি ক্লান্ত হয়ে একটা গাছে শাখায় গিয়ে বসলাম। ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করা দরকার, কি হচ্ছে এসব?

হঠাৎ আমার মাথায় একটি কৌতুহল জাগল। শাহ জালালের এক মাজারে যদি এই অবস্থা হয় তাহলে শত শত শাহ জালালের আস্তানা আছে চট্টগ্রামে। সেখানে গেলে কেমন হয়।

ভাবার সাথে সাথে চলে গেলাম চট্টগ্রামে।

যা দেখলাম তাতে আমার আক্কেল গূড়ুম। এখানে প্রতি রাস্তার মোড়ে মোড়ে মাজার। আর এসব মাজার ঘিরে হাজার হাজার মানুষ বাউলিয়া সাধনায় মগ্ন।

অনেক জায়গায় আবার রাস্তা ব্লক হয়ে আছে এদের অবস্থান বাউলিয়ানায়।

কি করব বুঝতে পারছিনা।

অনেক সাহস নিয়ে একজনের কাছে গেলাম। লোকটির লম্বা চুলে জঠ পাকিয়েছে। মনে হচ্ছে কয়েক যুগ মাথায় কারো স্পর্শ লাগেনি।

তিনি যথারীতি চোখ বন্ধ করে একতারা টুং টাং এর তালে মাথা দুলাচ্ছে।

আমি তার কাধে হাত রেখে ডাকলাম, ভাই সাহেব শুনেন।

লোকটা পিছনের দিকে এপাশ ওপাশ তাকিয়ে দেখল সবাই সংগীত সাধনায় নিমগ্ন।

আমি আবার ডাকলাম, ভাই সাহেব আমি একজন ভুত বলছি। আপনি আমাকে দেখবেন না। আপনি শুধু আমাকে বলুন সারা দেশে এসব কি চলছে?

লোকটা ভ্রু কুচকে কিছুক্ষন ভাবল।তারপর বলল, সারা দেশের মানুষ মিলে সম্রাট লালন শাহের উম্মত হয়েছি। আর আমাদের পীর হচ্ছেন বর্তমান সরকারের একজন প্রভাবশালী লোক "বাবা গওহর রিজবী"।

আমি বল্লাম,উনাকে কই পাওয়া যাবে।

লোকটা বলল, পীর সাহেব কেবলা এখন তীর্থস্থান কুস্টিয়ায় অবস্থান করছেন।

আমি চোখ বন্ধ করে নিমিষেই চলে গেলাম কুষ্টিয়ায়। গিয়ে দেখলাম মহা এলাহী কারবার।

তোরনের পর তোরন। তোরন যেন শেষই হয় না। তার ওপর লক্ষ লক্ষ মানুষ সাধু হবার সাধনা করছেন।

ভাবলাম পদব্রজে গেলে একবছর লাগবে পীর সাহেবের কাছে পৌছাতে।

দিলাম উড়াল।

খানকাহ তে গিয়ে সরাসরি বাবা গওহর রিজবীর সান্নিধ্যে চলে গেলাম।

দেখলাম তার চারপাশে বিদেশী আতরের প্রকট সুগ্রান। আতর জ্বলছে। ধুপ পুড়ছে।আর বাবার খাদেম হিসাবে বসে আছেন খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনা, তারেক, জয় সহ দেশের রুইকাতলা সবাই।

আমি বাবাজানের খেদমতে হাজির হয়ে বললাম, বাবা কি আমাকে দেখতে পাচ্ছেন?

বাবা বলল, হ্যা রে পাগলা। তুই অগ্রহায়ণ। আজ সকালে ভুত হয়ে গেছিস। বল কি তোর মন বাসনা।

আমি বললাম, বাবা আমার কোন বাসনা নাই, শুধু জানতে ইচ্ছে হচ্ছে এত কিছু কেমন করে হয়ে গেল।

বাবাজান মুচকি হেসে বলল,বাংগালীরা হুজুগে জাতি আমি জানতাম, কিন্তু এতটা হুজুগে জানতাম না। হা হা হা। আমি শুধু বলেছি, দাংগাহাংগামা বন্ধ করতে হলে দেশের সবাইকে লালন শাহের জীবন অনুসরন করতে হবে। আর তাতেই কেল্লা ফতে। হে হে হে। দেশের সবাই মিলে আমাকে বানিয়ে দিল পীর বাবা আর লালন কে বানালো নবী। সবাই এখন বাউলিয়ানায় মগ্ন। দাংগাহাংগামা বন্ধ হয়ে গেছে অবশ্য। এখন যা আছে তার নাম চুরি,লুটপাট, ধর্ষণ। সাধুরা হাতের কাছে যা পায় তাই নিজের মনে করে ব্যবহার করে। আর ভিক্টিমরাও কিছু বলেনা। কারন সবাই তো লালনের মতাদর্শী হতে চাই। বড়ই আরামে আছি হযরত লালন শাহের দোয়ায়।হেহেহে এখন শুধু আশা বাকি জীবন যেন এভাবেই কাটে।

আমি বললাম, বাহ ভালো তো। বাবা আমি যাই আপনি সাধনা করেন। সময় গেলে সাধন হবেনা। ।

বিষয়: রাজনীতি

১১১১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

276202
২০ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৩:১৪
বুড়া মিয়া লিখেছেন : ভালো লাগলো

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File