প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন
লিখেছেন লিখেছেন অগ্রহায়ণ ০৫ অক্টোবর, ২০১৪, ১১:২৪:১৭ রাত
হার্ড ব্রেক কষে গাডীটা হঠাৎ দাড়িয়ে গেল। কেউ একজন গাড়ী থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল থাকে। পড়ে গিয়েই মাটিতে গড়াগড়ি খেলেন তিনি। উঠে দাড়াতে কষ্ট হচ্ছে। মোটা কাপড় দিয়ে চোখ বাধা আর নাইলেনের রশি দিয়ে পিছমোড়া করে বেধে দেওয়া হয়েছে হাত।
অনেক কষ্টে তিনি উঠে দাড়ালেন। সাথে সাথে কয়েকটি বুটের শব্দ পেলেন তিনি, ওরা নামছে। পায়ের আওয়াজে আন্দাজ করলেন ৬/৭ জন হতে পারে। নেমেই উনার চারপাশে বৃত্তাকারে প্রদক্ষিণ শুরু করল তারা। কিন্তু এরা কার? কি চাই তার কাছে? তারা কি জানে না আমি একজন প্রধানমন্ত্রী। আমি চাইলেই যে কোন কিছু করতে পারি।
হঠাৎ চক্র বন্ধ করে কেউ একজন এগিয়ে এল প্রধানমন্ত্রীর কাছে। এসেই হাতের বাধন খুলতে খুলতে বলল, আমরা আপনার হাতের বাধন খুলে দিচ্ছি।আপনি চাইলে নিজেই চোখের পট্টী খুলতে পারবেন। কিন্তু যতক্ষণ আমাদের গাড়ির আওয়াজ পাবেন, দয়াকরে চোখের বাধন খুলবেন না।
প্রধানমন্ত্রী উৎকীর্ণ হয়ে জানতে চাইলেন, তোমরা কারা? কি চাও আমার কাছে?
সেই কন্ঠ টি উত্তর করলো, আমরা আপনার জনগণ। আর কি চাই তা একটু পরেই ঠের পাবেন।
বলেই সবাই গাড়ীতে উঠে পড়লো।
গাড়ির শব্দ মিলিয়ে যাবার সাথে সাথে চোখের বাধন খুলে ফেললেন তিনি।
কিছুক্ষন ঠাওর করতে পারলেন না কোথায় আছেন। যখন দৃষ্টি স্বাভাবিক হয়ে চারিদিকে তাকালো, বুকের মধ্যে ধ্বক করে উঠলো।
দুর দুর পর্যন্ত শুধু মাঠের পর মাঠ, যেন শুষ্ক মরুভূমি। কোথাও কেউ নেই। বুক শুকিয়ে গেল তার। এই প্রথম প্রচন্ড তৃষনা টের পেলেন তিনি।
শরীরের সমস্ত শক্তি একত্রিত করে চিৎকার দিতে চাইলেন, কিন্তু একটা শব্দও বেরুলো না।
তিনি অসহায় হয়ে বসে পড়লেন। আর তখনই হো হা হা করে কেউ একজন হেসে উঠলো। সেই হাসি প্রান্তরে ধাক্কা খেয়ে আবার ফিরে আসছে। হাসি যেন শেষ ই হচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রীর অন্তরাত্মা কেপে উঠলো।
-এবার বুঝেছেন "ভয়" কাকে বলে মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী। সেই অদৃশ্য কন্ঠস্বর বলে উঠলো।
- কারা তোমরা, কি চাও আমার কাছে ? বললেন প্রধানমন্ত্রী।
- চুপ, একদম চুপ। এত বছর আপনি বলেছেন আর আমরা শুধু শুনেছি।
আমরা যখনি কিছু বলতে চেয়েছি আপনি আমাদের ঠুটি চেপে ধরেছেন।
আজ আমরা বলবো আপনি শুনবেন।
- বলুন, বলুন। আমি আপনাদের সব কথা শুনবো। কিন্তু তার আগে আমাকে একটু পানি দিন। আমি আপনাদের সব দাবি মেনে নিবো।
- হা হা হা। পানি দেবো, অবশ্যই দেব। কিন্তু আমাদের দাবি আপনি কিভাবে পুর্ন করবেন। আপনাকে আমরা কিছুক্ষনের মধ্যে হত্যা করবো। হো হা হা....
প্রধানমন্ত্রীর পুরো শরীর জমে গেল এই কথা শুনে। মনে হচ্ছে এখনি মৃত্যুদুত এসে তার জান টেনে বের করে নিবে।
তিনি চারপাশে চরকার মতো ঘুরতে লাগলেন। এখনো ভেসে আসছে সেই কুৎসিত হাসি। যেন এই হাসি শুনতে শুনতে তিনি পাগল হয়ে যাবেন।
দুহাতে কান চেপে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী। বুকের সমস্ত সাহস একত্রিত করে দিলে একদৌড়. . .
দৌড়াচ্ছেন আর দৌড়াচ্ছেন। কিন্তু কোন দিশা পাচ্ছেন না তিনি। পিছনে ধেয়ে আসছে সেই ভয়ংকর হাসির গর্জন।
হঠাৎ একটা পাথরের সাথে উষ্টা খেয়ে পড়ে গেলেন তিনি।
তড়াক করে ঘুম থেকে জেগে উঠলেন প্রধানমন্ত্রী। কলিজা ধরপর করতে লাগলো তার। নিজের হাতে, গলায়, মুখে ছুয়ে দেখলেন তিনি। সারা শরীর ঘেমে একাকার।
তাহলে কি এতক্ষণ স্বপ্ন দেখেছেন। নিজের মনকে প্রশ্ন করলেন নিজেই।
অন্ধকারে হাতড়ে বেড সুইস অন করে বাতি জালালেন। কাপা কাপা হাতে টেবিলে রাখা পানির গ্লাস নিয়ে ঢক ঢক করে সব টুকুন পানি খেলেন তিনি।
দেওয়ালে গড়ির দিকে তাকালেন। ২টা ২৩ মিনিট।
তিনি আস্তে আস্তে বিছানা ছেড়ে উঠে বাথরুমের দিকে গেলেন। দীর্ঘক্ষণ মাথায় পানি ঢাললেন।
অযু করে বাথরুম থেকে বের হলেন তিনি।
মনে মনে ঠিক করলেন, বাকি রাত নামাজেই কাটাবেন। এবং জীবনের সমস্ত পাপের জন্য তাওবা করবেন।
সকাল ৮ টা।
প্রধানমন্ত্রী নিজের পিএস কে অফিস রুমে ডাকলেন।
তড়িগড়ি করে পিএস প্রধানমন্ত্রীর কক্ষে প্রবেশ করলো। ঢুকে দেখলেন প্রধানমন্ত্রী কাগজে কি যেন লিখছেন। পিএস চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো।
একটু পর কাগজ থেকে মাথা তুলে পিএস এর দিকে থাকালেন তিনি।
- এসো, এই পেপার টা অফিসে সার্কুলেশন করে দাও। আর বিকেল ৪:৩০ মিনিটে জরুরী সংবাদ সম্মেলন আয়োজন কর।
আর হ্যা, দেশের সমস্ত বড় দলের প্রধান কে ও আমন্ত্রণ করো। তার যেন অবশ্যই উপস্থিত হয়। এখন যাও।
- জ্বী, আমি এখনি কাজে নেমে পড়ছি।
যদি কিছু মনে না করেন একটা প্রশ্ন করতাম। "আপনার শরীর ভালো তো?"
- হ্যা আমি ভালো আছি। তুমি যাও, যা বলছি করো।
বিকেল ৪:২৫ মিনিট।
দৃঢ পায়ে কনফারেন্স রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী .....
বিষয়: সাহিত্য
১৮৬৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন