জন্মদিন ও আমার ভাবনা
লিখেছেন লিখেছেন খালেদ সাইফুদ্দিন ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৫:০৮:৪২ সকাল
বছর ঘুরে জন্মদিন এসে যখন ঘরের দরজায় দড়ায় , আমরা প্রত্যকে অতি আনন্দে তাকে স্বাগত জানাই। এযেন আমাদের বিশাল অর্জন। এইদিনটিকে পরিবার,আত্মীয়স্বজন,বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে উৎযাপন করি। কিন্তু আমরা বুঝতে পারিনা একটি জন্মদিন উৎযাপন করার মাধ্যমে আমরা কোন গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
কয়দিন আগে অবসরে বসে এ্যালবাম খুলে যখন পুরানো ছবিগুলো দেখছিলাম,মনের মধ্যে এক ভিন্ন চিন্তার উদয় হল। ছবিগুলো আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় অনেক পেছনে, আমার শিশুকাল,শৈশবকালে। আব্বার হাত ধরে যখন স্কুলে ভর্তি হতে গিয়েছিলাম তখন আব্বা সুসাস্হ্য সম্পন্ন একজন সবল মানুষ।আব্বা শিখিয়েছেন কিভাবে রাস্তা পার হব,রাস্তার কোন পাশ দিয়ে হাটব। ভালভাবেই শিখেছিলাম, আজও তা মেনে চলি।আমি শিখিয়েছি আমার সন্তানদের।দিন মাস বছর , আমি বড় হতে থাকি, স্কুল , কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় , তারপর কর্মজীবনে পা দেয়া। আর আব্বা ? তিনিও একটি নির্দিষ্ঠ সময় পর্যন্ত বড় হলেন, তারপর উনার স্বাস্থ্যের ‘ইউ-টার্ন’। যার হাত ধরে আমি হাটা শিখেছি,স্কুলে গিয়েছি, আজ তিনি আমার হাত ধরে মসজিদে যান, ওষুধের দোকানে যান।আরেক দিকে আমার সন্তান যাকে আমি হাটা শিখাচ্ছি। আমি এই দুইয়ের মাঝখানে।
এবারের ছুটিতে আব্বার সাথে একদিন আড্ডায় বসে জিজ্ঞাস করলাম,-‘আব্বা আপনার বয়স কত?’ আব্বা চিন্তা না করেই বলে দিলেন -৮২ বছর, জন্ম তারিখ ৩রা মার্চ ১৯৩৩।
শুনে বেশ খুশিই হলাম এই ভেবে যে –মাশাল্লাহ আব্বার স্মরণশক্তি এখনো বেশ ভাল। পাশে থাকা ছোট ভাই জিজ্ঞাস করল ‘বিয়ে কবে করেছেন মনে আছে ?’ আব্বা হেসে উত্তর দিলেন- হ্যা মনে আছে – ২০শে ডিসেম্বর ১৯৫৯, রবিবার। ৮ ভরি স্বর্ন দিয়েছিলাম। স্বর্ন কিনেছিলাম,আমাদের নোবেল বিজয়ী ডঃ ইউনুসের আব্বার দোকান থেকে। চট্টগ্রামের বকশির হাটে ডঃ ইউনুসের আব্বা জনাব দুদু মিয়া সওদাগরের স্বর্নের দোকান থেকে ১০০টাকা ভরি দরে স্বর্ন কিনেছিলাম।;
আমরা সবাই উনার কথাগুলা উপভোগ করলাম।আব্বার বয়স এখন ৮২। ৮২টি জন্মদিন উনি অতিক্রম করেছেন। কিন্তু কোথায় উনার গন্তব্য ,কিংবা আমার,আমাদের।এরি মধ্যে আমার আম্মা উনার গন্তব্যে পৌছে গিয়েছে আজ থেকে ২৯ বছর আগে। এটা কি সত্য নয় যে আমরা এক ‘হাই ওয়ে’ অতিক্রম করছি।আমাদের এক একটি জন্মদিন আমাদের জন্য এক একটি মাইল ফলক। যেই হাই ওয়ের শেষ প্রন্তে আছে আমাদের নিজ নিজ করবস্থান। আর জন্মদিন নামক ‘মাইল ফলকে লিখা থাকে ‘করবস্থান-৬০বছর’ -‘করবস্থান-৫৯বছর’-‘করবস্থান-৫৮বছর’ ---- ‘করবস্থান-০০বছর’। (নিজ নিজ হায়াত অনুযায়ী)। যা আমরা দেখতে পাই না।
একটি জন্মদিন আসা মানে আমরা আমাদের গন্তব্যের দিকে এক বছর এগিয়ে যাওয়া। এই উপলব্ধি যদি আমাদের থাকে তবে আমাদের প্রস্তুতি নেয়া উচিৎ যে কোন মহুর্তে ডাক শুনার ‘আপনার স্টেশান এসেছে’।
প্রতিটা জন্মদিনে আমাদের আনন্দ উল্লাসে নয় বরং আল্লাহর কাছে গুনা মাফ চেয়ে ক্রন্দন করে কাটানো উচিৎ।আমারা যদি মোমেন হতে পারি তা হবে ভিন্ন।গন্তব্যে পৌছার মাধ্যমে মহান আল্লাহ দিদার লাভের প্রত্যাশীরা অবশ্যই ভীত হবে না।
‘আল্লাহ আমাদের সবাইকে মোমেন বান্দাদের দলভুক্ত করুন’
বিষয়: বিবিধ
১৩১৩ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আসলেই ত দিন দিন নির্দিষ্ট সেই গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া মানেই জীবনের কিছু সময় কমে যাওয়া। অথচ এই অনুভূতি গুলি হৃদয়কে নাড়া দেয় না। দুনিয়া মুখী এই জীবনকে নিয়ে কতই না পরিকল্পনা! কত স্বপ্ন, কত সাধ, কত আশা!
যেই হাই ওয়ের শেষ প্রন্তে আছে আমাদের নিজ নিজ করবস্থান।
দুনিয়ার শেষ আর আখেরাতের শুরু কবরের জীবন সম্পর্কে আপনার এই বানীটি খুবই যুৎসই। অনেক অনেক ধন্যাবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন