আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় জুময়ার নামাযের খোৎবা সম্পর্কে ফতোয়া
লিখেছেন লিখেছেন খালেদ সাইফুদ্দিন ২২ নভেম্বর, ২০১৪, ১২:২১:৪৫ দুপুর
ওলামায়ে কেরাম এবিষয়ে একমত যে, জুময়ার নামাযের খোতবা আরবীতে হওয়া ভাল। তবে এবিষয়ে যে
সকল শর্ত আছে সেগুলোর ব্যাপারে তাদের মতভেদ আছে। এ ব্যাপারে আলেমদের তিনটি মত হচ্ছে নিন্মরূপঃ
১। শ্রোতারা আরবী না জানলেও খতীবের পক্ষে আরবীতে খোৎবা দেয়া সম্ভব হলে আরবীতেই দেয়া শর্ত,
এটা মালেকী মাজহাবের মত।
২। আরবীতে খতীব খোৎবা দিতে সক্ষম হলে আরবীতেই খোৎবা দেয়া শর্ত। তবে সকল শ্রোতা আরবী না জানলে শ্রোতাদের ভাষাতেই খোৎবা দেবেন। এটাই শাফেঈদের বিশুদ্ধ মাজহাব। কোন কোন হাম্বলী আলেমের মত ও তাই। (নওয়ীর আল-মাজমু ১ম খন্ড ৫২২ পৃষ্ঠা )
৩। আরবীতে খোৎবা দেয়া মোস্তাহাব, শর্ত নয়। খতীব আরবী ব্যতীত নিজ ভাষায় খোৎবা দিতে পারেন।
এটা ইমাম আবু হানিফার মত। শাফেঈ মাজহাবের ও কোন কোন আলেমের মত এটাই।
(রদ্দুল মোহতার ১ম খন্ড ৫৪৩ পৃঃ , আল-মাউসুয়াই আল-ফেকহিয়া, ১৯খন্ড ১৮০ পৃঃ )
এই ৩য় মতটিই বিশুদ্ধ। আধুনিক যুগের একদল আলেম এমতটিকেই গ্রহণ করেছেন।তাদের মতে আরবীতে খোৎবা দেয়া ওয়াজিব মর্মে কোন সুস্পষ্ট প্রমাণ নেই। খোৎবার লক্ষ হল,ওয়াজ-নসীহত, উপদেশ ও উপকারিতা। সমবেত লোকদের ভাষায় ব্যতীত এলক্ষ অর্জিত হবেনা।
এমর্মে রাবেতা আলমে ইসলামীর অধীন ফেকাহ একাডেমীর প্রস্তাবে বলা হয়েছে –
“ন্যায় ও ইনসাফপুর্ন মত হল আনারব দেশে জুময়াহ ও দুই ঈদের নামাযের খোৎবা আরবীতে হতে হবে,এটা কোন শর্ত নয়। তবে এক্ষেত্রে উত্তম হল,আনারব লোকদেরকে কোরআন ও আরবী ভাষা শুনতে
আভ্যস্থ করে গড়ে তোলার জন্য খোৎবার ভুমিকা ও কোরআনের আয়াত আরবীতে পেশ করা উত্তম যেন কোরআনের ভাষা শিখতে ও পড়তে সহজ হয়। তারপর ইমাম শ্রোতাদের বোধগম্য ভাষায় খোৎবা দিবেন।
(ইসলামী ফেকাহ একাডেমীর প্রস্তাবাবলী – পৃঃ- ৯৯, ৫ম অধিবেশন, ৫ম প্রস্তাব।)
সৌদী -আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটির সদস্য ওলামায়ে কেরাম বলেন – রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর কোন হাদীসে আরবী ভাষায় খোৎবা দেয়া শর্ত বলে বর্ণিত নাই। তবে নবী করিম (সঃ) জুময়াহ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে নিজের ও নিজ সম্প্রদায়ের ভাষা আরবীতে খোৎবা দিয়েছেন। তিনি যাদেরকে উপদেশ দিতেন তাদেরকে বিভিন্ন বোধগম্য ভাষায়ই দিতেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন দেশের লেখা রাজা-বাদশাদের কাছে আরবী ভাষায় লিখা চিঠি পাঠিয়েছেন। তিনি জানতেন যে,তাদের ভাষা আরবী নয়, কিন্তু তারা তা নিজেদের ভাষায় অনুবাদ করিয়ে তা বুঝে নিবে।এই তথ্যের ভিত্তিতে জুমায় খতীবের পক্ষে অনারব দেশের কিংবা যে দেশের আধিকাংশ লোক আরবী জানেন সেখানে আরবী ভাষায় খোৎবাহ দেয়া জায়েয, যাতে করে তারা খোৎবার উপদেশ বুঝে উপকৃত হতে পারে।
অনুরুপ ভাবে, খতীব আরবী ব্যতীত নিজ দেশের ভাষায়ও খোৎবা দিতে পারেন।এর ফলে ওয়াজ নসীহত,পথ প্রদর্শন ও শিক্ষাসহ খোৎবার মুল লক্ষ অর্জিত হবে।তবে আরবীতে খোৎবা দিলে শ্রোতাদের ভাষায় তার অনুবাদ করা উত্তম। এর ফলে খোৎবা ও চিঠিতে নবী (সঃ) এর অনুসৃত সুন্নতদয়ের সংমিশ্রন ঘটবে, খোতবার লক্ষ্য অর্জিত হবে এবং মতপার্থক্যের গন্ডি থেকেও বেরিয়ে আসা যাবে। (ফতোয়া আল্লাহজনাহ আদ-দায়েমা-৮ম খন্ড, ২৫৩ পঃ)
আল্লামা শেখ বিন বাজ (রাঃ) বলেন- আল্লাহ ভাল জানেন, তবে মাসয়ালটি বিস্তারিত বর্ণনার অপেক্ষা রাখে।
যদি মসজিদের আধিকাংশ মুসল্লী অনারব হয় এবং আরবী না বুঝে তাহলে, আনারবী ভাষায় খোৎবা দেয়া দোষনীয় নয়। আর আরবীতে দিলে পরে তা অনুবাদ করতে হবে।তবে অধিকাংশ মুসল্লী যদি আরবী বুঝে এবং খোৎবার অর্থ হৃদয়গম করতে পারে,তখন আরবীতে খোতবা দেয়া এবং নবী (সঃ) খেলাফ না করা উত্তম। কেননা, আমাদের নেক পরবসুরীরা মসজিদে অনারব লোক থাকা সত্ত্বেও আরবীতেই খোতবা দিয়েছেন এবং এর অনুবাদ কনেননি।কেননা ইসলামের সম্মান মুসল্লীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও আরবী ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য তারা এরুপ করেছেন।
তবে প্র্যাওজনের আলোকে বইধতার নীতিই হচ্ছে ইসলামী শরীয়ার মূলনীতি। আল্লাহ বলেন –
আমি নিজ কাওমের ভাষা ছাড়া কোন ভাষায় নবী রসুল পাঠাইনি যেন তারা কওমের উদ্দেশে তা সুস্পষ্ট বর্ণনায় করে বুঝিয়ে দিতে পারে।
একারনে সাহাবায়ে কেরাম পারস্য ও রোম সাম্রাজে অভিযানের সময় অনুবাদকের সাহায্যে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার আগে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেননি। (মজমু ফাতাওয়া ইবনে বাজ ১২শ খন্ড ৩৭২ পঃ)
আল্লামা শেখ সালেহ ওসাইমিন বলেন-এটি শুদ্ব যে খতীব এমন ভাষায় খোৎবা দিতে পারেন যা ঊপস্থিত লোকদের বুঝতে অক্ষম। তবে যদি ঐ লোকেরা অনারব হয় এবং আরবী ভাষা না জানে তখন খতীব তাদের ভাষায় খোৎবা দেবেন। কেননা এটাই হবে আল্লাহর আইন-কানুন বর্ণনা করা,ওয়াজ নসীহত করা ও উপদেশ দেয়া।তবে কোরাআনের আয়াত অবশ্যই আরবীতে পেশ করে এর অনুবাদ করতে হবে।এটা জায়েজ হওয়ার প্রমান হল---------
“আমি নিজ কাওমের ভাষা ছাড়া কোন ভাষায় নবী-রাসুল পঠাইনি, যেন তারা কওমের উদ্দেশে তা সুস্পষ্ঠ বর্ণনা করে বুঝিয়ে দিতে পারেন।আল্লাহ বর্ণনার মাধ্যম হিসাবে কাওমের বোধগম্য ভাষার কথা ঊল্লেখ করেছেন। এর ভিত্তিতে খতীব আরবী ব্যতীত অন্য ভাষায় ও খোৎবা দিতে পারেন। তবে কোনআনের আয়াত অবশ্যই আরবীতে তেলাওয়াত করবেন।তারপর তা কাওমের ভাষায় ব্যাখ্যা করবেন।
(ফতোয়া নূর আলা-আদ-দারব , ফতোয়া আসসালাহ/সালাতুল জুময়া)
বিষয়: বিবিধ
২০৬৪ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন