এবারের ছুটির ৪২ দিন - পর্ব-১
লিখেছেন লিখেছেন খালেদ সাইফুদ্দিন ১৭ নভেম্বর, ২০১৪, ১০:০১:১৮ রাত
ছুটির ব্যাপারে কিছুই না বলার ইচ্ছা ছিল পরিবারকে,যাওয়ার ২/৩ দিন আগে জানাব ঠিক করেছিলাম।কিন্তু আল্লাহ হয়তো আমাকে পুরুষের শরীরের সাথে নারীর পেঠ সংযুক্ত করেছেন, যার কারনে আমার পেঠে কোন কথাই রাখা যায় না। ফোনে জানিয়ে দিলাম আমার স্ত্রীকে ছুটিতে যাওয়ার কথা তারিখ সহ। আর দেরী নাই, সাথে সাথে খবর পৌছে গেল শ্বশুড় মশাইয়ের কানে।আমার শ্বশুড় মশাই খুব মজার একজন মানুষ। টেনশান ছাড়া মানুষ দেখলাম উনাকেই। ভ্রমনে খুব আগ্রহী তিনি। সু্যোগ পেলেই ছুটে যান রাঙ্গামাটি,বান্দারবান,কক্সবাজার,রামু সহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।সাতক্ষীরায় উনার চিংড়ি প্রজেক্ট থাকা কালের অনেক স্মৃতিবিজরিত কাহিনী আছে ঐ এলাকায়,যা ওনার কাছে শুনেছি পরে।
আমার ছুটির তারিখ জানার পর পরই ঠিক করলেন কোরবানীর একদিন পরই শরিয়তপুর যাবে বেরাতে। শ্বশুড়ের তিন মেয়ে ২ ছেলে। আমার বউ সবার বড়। সেই হিসাবে আমি বড় জামাইয়ের পদটি পেয়ে যাই। ২ শালিকারও বিয়ে হয়েছে।এক শালা বিবাহিত।ঘরে একটি লক্ষী বউ আর ১মেয়ে ১ছেলে আছে।আমার বিয়ের সময় ছোট শালার বয়স ৬মাস,এখনো বাবার হোটেলে আছে।সাবার আদরের।ভ্রমন সঙ্গী হিসাবে উনার ৩মেয়ে ১ছেলের পরিবার ও ১ছেলেকে নিয়ে উনার পরিবার।কাজের মেয়ে সহ ২২জন।
শরিয়তপুর আমার নানা শ্বশুড়ের বাড়ী। বিয়ের ১৩বছরের মধ্যে একবারও যাওয়া হয়নি।খুব ইচ্ছা যাওয়ার,কিন্তু আমার আপত্তি নৌ-পদ।কিছুদিন আগের লঞ্চ ডুবির ভিডিও চিত্র এখনো চোখে ভাসে।যাত্রিদের চিৎকার কানের পর্দা ভেদ করে হৃদয়ের মাঝে এখনো আঘাত করে।জন্মের পর মৃত্যু অবধারিত জেনেও বেচে থাকার লোভ সামলাতে পারিনা।৭১এর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলছে।অনেকেই ফাঁসির রায় হয়েছে এর মধ্যে একজনের ফাঁসিও কার্যকর করা হয়।এদের কেউ মৃত্যু নিয়ে চিন্তিত ছিলেন না। প্রত্যেকেই হাসি খুসি ভাবে মেনে নিয়েছেন।অথচ আমি লঞ্চ ডুবির ভয়ে পরিবারের সাথে শরিয়তপুর যেতে রাজি হচ্ছিলাম না। কত দুর্বল ঈমানের মানুষ।আমার সাথে আমার ছোট শালীর জামাই যোগ দিলেন।তিনিও যাবেন না।কিন্তু কাজ হলনা।সংখ্যা গরিষ্ট ভোট পেয়ে আমার শ্বশুড় জয়ি হলেন। ‘না’ এর পক্ষে আমরা মাত্র ২ জন।
৮ই অক্টোবর সকাল ৭ টায় ট্রেনে লাকসাম এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।আমার শ্বশুড়ের পুরা খান্দান সাথে।যদি কোন দুর্ঘটনা হয়ে তবে বাতি জালানোর মত বংশে আর কেউ থাকবেনা।মেঝ শালীর শ্বশুড় সেই আশঙ্কায় উনার বড় নাতীকে যেতে দিলেন না।১০ বছরের এই ছোট্ট শিশুটি এত সুন্দর ভ্রমন থেকে বঞ্চিত হল।ট্রেনের টিকেট আগেই করে রেখেছেন শ্বশুড় মশাই।এসি টিকেট পাওয়া যায় নাই।নন-এসিতে ট্রাভেল করতে হবে শুনে মাথার উপড় সিডর বয়ে গেল।উপায় নাই,আমি বন্ধি কারাগারে।অনেকদিন পর একটা বড় গ্রুপ নিয়ে ভ্রমন করছি।বেশ ভালই লাগছে।
যথা সময়ে লাকসাম পৌছলাম।ওখান থেকে মাইক্রো ভাড়া করা হল চাঁদপুর নৌ- ঘাট যাওয়ার জন্য।ঘাটে যাওয়ার আগে বিসিক শিল্প এলাকায় যাত্রা বিরতি।ওটাকে যাত্রাবিরতি না বলে খাদ্য বিরতি বলা যায়।আমার শ্বশুড়ের এক বন্ধু আমাদের জন্য দুপুরের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।খাওয়ার মধ্যে ইলিশ মাছ আর গরুর মাংস,সাথে ডালতো আছেই।লঞ্চ ছাড়বে দুপুর ২টায়।খাবার আসল ১টা ৫০মিনিটে।সবাই চিন্তিত,হয়তো লঞ্চ মিস করব।ভরসা ছিল শ্বশুড়ের একটি ফোন।তিনি তাই করলেন।বুঝলাম না কি বললেন আর কাকে বললেন।তিনি আস্যস্থ করলেন ২৫ মিনিট লঞ্চ আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে।শ্বশুড়ের ক্ষমতা দেখে গর্ববোধ করলাম। ইলিশের টুকরাগুলো ছিল বেশ বড়।আমার স্ত্রী আমাকে এক টুকরা ইলিশ মাছ আর ভাতের একটা প্লেট দিল।আমি লক্ষী ছেলের মত খাওয়া শুরু করলাম।শ্বাশুড়ী এসে আরো এক টুকরা দিলেন।ডান-বাম দেখে খেয়ে নিলাম।খাওয়া শেষ করে শুনলাম আমার ছোট শালীর জামাই ৫টুকরা ইলিশ শেষ করেছেন নিশ্চুপে।২টা ২৫ মিনিটে আমরা লঞ্চে উঠলাম।২৫ মিনিট দেরি হওয়ায় যাত্রীদের মধ্যে একটা চাপা ক্ষোভ থাকলেও তার বহিঃপ্রকাশ ঘটলনা।আমরা লঞ্চে উঠার পর পরই লঞ্চের যাত্রা শুরু হয়।
গ্রামের বাড়ী যাওয়ার সময় অনেকবার কর্নফুলী পারি দিয়েছি নৌকা ও ছোট ছোট লঞ্চে।কিন্তু পদ্মা বা মেঘনার মত নদী পার হওয়ার সৌভাগ্য আগে হয়নি।লঞ্চ চলছে আর আমার মনে পরে যায় ছোট বেলার ‘সাহেব আর নৌকার মাঝির’ গল্প।কেউ যেন আমার কানে কানে জিজ্ঞাস করছে ‘সাতার জানিস বাপু’? নিজের অজান্তেই উত্তর দিলাম ‘না’।ভাগ্যিস কেউ শুনেনি।
পদ্মা এত শান্ত হবে চিন্তা করি নাই।মনে হচ্ছিল কাশ বনের ধারে কেউ সাদা চাদর বিছিয়ে দিয়েছে আমাদের যাতায়াতের জন্য।শরিয়তপুর আমার শ্বশুড়ের শ্বশুড় বাড়ী কিন্তু দুষ্ট হাওয়া আমার সাথেই যেন দুষ্ট খেলায় মেতেছে।কেবিন বুক করা ছিল কিন্তু একে একে সবাই কেবিন থেকে বের হয়ে লঞ্চের সামনের খোলা জায়গাটা দখল করে বসল।বাচ্চারা বেশ উপভোগ করছে নৌ-ভ্রমন।একটু পর পর ফেরিওয়ালার হাক ডাক। চা,ঝাল মুড়ি, চনাচুর,আমড়া। শুধু বাচ্চারা না বাচ্চার মা- বাবা,নানা-নানী ঐ ফেরিওয়ালার ক্রেতা হয়ে বসল।
লঞ্চ চলছে তার গতিতে আর আমরা অপেক্ষায় আছে ঘাঠে লঞ্চ ভিড়ার।
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
২৬৩৩ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন