সিসি ও জাতিসংঘকে তুলোধুনো করলেন এরদোগান

লিখেছেন লিখেছেন নির্বাক আমি ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৯:৪৭:২৮ সকাল

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেয়া ভাষণে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েব এরদোগান মিশরের স্বৈরশাসক আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এবং জাতিসংঘকে তুলোধুনো করেছেন।

এরদোগান বলেন, জাতিসংঘের পাশাপাশি গণতান্ত্রিক দেশগুলোও মিশরের নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে উৎখাত এবং নিজেদের পছন্দকে রক্ষার সচেষ্ট হাজার হাজার নিরাপরাধ মানুষের হত্যাযজ্ঞকে নীরব দর্শক হয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করেনি।’

সিসিরি দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি এই ক্যু সংঘটিত করলো তাকে বৈধতা দেয়া হচ্ছে।’

বুধবারের এই ভাষণে বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় গণতান্ত্রিক নেতা এরদোগান বলেন, ‘আমরা যদি গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে চাই তবে আসুন ব্যালট বাক্সকে শ্রদ্ধা জানাই। গণতন্ত্র ছাড়া যারা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে, আমরা যদি তাদের পক্ষ নেই তবে এ জাতিসংঘের অস্তিত্ব নিয়ে আমার বিস্ময় জাগে।’

এরদোগান বলেন, ‘যারা ইরাক ও সিরিয়ায় গণহত্যার বিষয়ে এবং মিশরে গণতন্ত্র হত্যার বিষয়ে আপত্তি তোলে তাদের বক্তব্যের পরপরই তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদীদের সহায়তার অন্যায় ও ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়।’

এরদোগানের এই বক্তব্যকে সত্য প্রমাণিত করে তার বক্তব্য শেষ হওয়ার পরপর মিশরীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিসির বিষয়ে তার বক্তব্য নাকচ করে দেয় এবং এরদোগানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে সহায়তার অভিযোগ আনে।

এরদোগান বলেন, নিরাপরাধ মানুষকে হত্যার পর জাতিসংঘের নিষ্ক্রিয়তা এবং সেনা অভ্যুত্থান জনগণের মধ্যে হতাশা ও অবিশ্বাসের সৃষ্টি করছে এবং অনেককে সন্ত্রাসবাদী কমকাণ্ডের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

‘শিশু, নিরাপরাধ নারীদের গণহত্যা এবং অস্ত্র ও সাঁজোয়া যান নিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর যারা নীরব থাকেন প্রকারান্তরে তারা ওইসব অপরাধেই অংশগ্রহণ করেন’, বলেন এরদোগান।

‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আধুনিক বিশ্বের এই দ্বিমুখী নীতি জনগণের মধ্যে গভীর অবিশ্বাসের সৃষ্টি করছে। এই অবিশ্বাস ন্যায়বিচারের ধারণাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং লাখ লাখ লোক হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছে’, বলেন এরদোগান।

এরদোগান বলেন, এ ধরণের হতাশাই সমসাময়িক সময়ে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাববাদের জন্ম দিচ্ছে।

ইরাক, আফগানিস্তান, মিশর,লিবিয়া, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইউক্রেন এবং ইয়েমেনের চলমান সংকট নিয়েও কথা বলেন এরদোগান।

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বর্বর শাসনের কড়া সমালোচক এরদোগান বলেন, সিরিয়ায় ১৭ হাজারের বেশি শিশু নিহত, ৩ লাখ ৭৫ হাজার শিশু আহত এবং ১৯ হাজার শিশু অন্তত একটি অঙ্গ হারিয়েছে।

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে ৪৯০ শিশুর মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে এরদোগান বলেন, তুরস্ক দ্বিরাষ্ট্রিক সমাধান এবং গাজার ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেয়াকে সমর্থন করে।

ইরাক, সিরিয়া ও ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধানে জাতিসংঘের আর সময় নষ্ট করা উচিৎ নয় বলেও মন্তব্য করেন এরদোগান।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ৫টি স্থায়ী সদস্যের নিয়ন্ত্রণের কঠোর সমালোচনা করে এরদোগান বলেন, ‘বিশ্ব এই পাঁচটির (দেশের) চেয়ে বড়। বিশ্বের উন্নয়নে জাতিসংঘের নিষ্ক্রিয়তার জন্য এই ৫টি দেশের ভূমিকা গ্রহণযোগ্য নয়।’

২০১৫-১৬ মেয়াদে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যপদে তুরস্কের প্রার্থীতার পক্ষে সমর্থন দেয়ার অনুরোধও জানান তিনি।

ইরাক ও সিরিয়ার জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের কড়া সমালোচনা করে এরদোগান বলেন, ‘ আইএসআইএল একটি রক্তপিপাসু সংগঠন এবং তুর্কি সরকার শুরু থেকেই এই সংগঠনের বিরুদ্ধে সব ধরণের বৈধ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।’

তিনি হুশিয়ার করে দেন যে এই সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পদক্ষেপে মনে রাখতে হবে যে ইসলামবিরোধী সংগঠনগুলো এই অজুহাতে যাতে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের মুসলমানদের বিরুদ্ধে নীতি গ্রহণরে সুযোগ না পায়।

বিষয়: বিবিধ

৮৭৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File