কপালে আরো দূভোর্গ আছে।

লিখেছেন লিখেছেন সাইফুল সাইমুম০১ ০১ নভেম্বর, ২০১৪, ১২:২১:৩৭ দুপুর

শিশির ভেজা সকাল। আবদুর রহিম মুন্সী প্রতিদিনকার নিয়মে মসজিদে ফজরের নামায পড়ে নুরু মিঞার দোকানে টুন্ডুলের গরম রুটি ও ডালভাজা খেতে অপেক্ষা করছিল। ঠিক সেই সময় তার সামনে দিয়ে কাঁধে একটি জাল ও কোমরে সাথে বাঁধা পুলটি নিয়ে হেটে যাচ্ছিল গোপাল।

জোরে একটি কাঁশি দিয়ে তিনি গোপালকে জিঞ্জেস করলেন ঃ গোপাল আজ সকাল সকাল কোন দিকে যাওয়া হচ্ছে?

উত্তরে গোপাল বলল ঃ মশায়! এই জালটিই আমার একমাত্র পূঁজি। সংসারে আয় রোজগার এই জালটির উপর নির্ভর করে , তাতো আপনি জানেন। আজ হাঙ্গরের দক্ষিণ দিকে যাচ্ছি।

- ঠিক আছে ! যাও। ভাল মাছ ধরা পড়লে দিয়ে যেও। পয়সা নগদে দিয়ে দেব।

- আচ্ছা! বলে গোপাল যেতে লাগল।

হাঙ্গরের যে ভাব দেখা যায়, আকাশের সাথে তার তেমন বনিবনা হচ্ছে না। গোপাল তবুও সেই খেপের পর খেপ মেরে যাচ্ছে। কয়েকটি পূঁটি ও একটি কই মাছ ছাড়া তার জালে এখন পযর্ন্ত বিক্রিমত মাছ ধরা পড়েনি। গভীর বিষন্নতার মাঝে ক্ল্যান্তির ছায়া তাকে ধীরে ধীরে ঘ্রাস করতেছে। তবুও তার চেষ্টার কমতি হচ্ছে না। মনের জোরটা আর স্থায়ী রাখতে পারছেনা। সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে চলছে। দক্ষিনা হাওয়ায় বার বার বৃষ্টির আবাস দিয়ে যাচ্ছে। রাখাল কৃষক সবায় আকাশের এই তান্ডব মেঘের দৌড়াদোড়ি দেখতে পেয়ে, তারাও বাড়ী ফিরতে দৌড়ের প্রতিযোগিতা শরু করল। হাঙরের কিনারায় ছোট ছোট পানসীর গুলোর নোঙর পেলে মাঝিরা ঘরে ফিরে গেল। গোপাল ফিরে গেলে আজ তার পরিবার না খেয়ে থাকতে হবে। নড়বড়ে মনকে আরো দৃঢ় করে জালটি হাঙ্গরে ছাড়ল। সকল ভাবনা প্রহর কেটে হঠাৎ জালের রশি টান ভার মনে হল। খুব সর্তকতার সাথে যখন জালটি উপরে

উঠালো, কাদা ময়লা গুলো ধুয়ে দেখল বড় কোন মাছ নেই। একটি মরা মানুষের মাথার খুলি। তা দেখে গোপাল যতটা বিস্মিত হয়নি তার চেয়ে অনেক

বেশি বিস্মিত হল খুলিটার কপালে লেখা রয়েছে, ”কপালে আরো দূর্ভোগ আছে”। গোপাল খুব জোরে জোরে হাসল। নিরবতার বেঁদ ছিন্ন করে তার

হাসি তাকে ক্লান্তি অবছায়া থেকে কিছুক্ষনের জন্য মুক্তি করে দিল। খুলিটা নিয়ে সে বাড়ী ফিরে আসল।

গোপালের বউ রতœা আগ্রহ নিয়ে স্বামীর নিকটে আসতে দেখল তার হাতে মাছের পরিবর্তে মরা মানুষের মাথার খুলি। হাসি মুখটি ঘোমরা করে আর কিছুই

গোপালের সামনে বলল না। রতœা নিজের কাজে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ল। কিছুক্ষন পর নিজেই নিজের সাথে জ্ঞ্যনর জ্যনর সুরে বলল ঃ আর কত কষ্ট

করব? কুলক্ষনে সংসারটা বসতে চলেছে। আজ আবার মরা মানুষের মাথা খুলি নিয়ে বাড়ী ফিরল। তাদের মেয়ে আদুরী ও কুসুম স্কুল থেকে ফিরে এসে

বাবার হাতে খুলিটা দেখল । ভয় পেয়ে দৌড়ে মায়ের কাছে গেল। গোপাল খুলিটাকে একটি বাঁশের সম্মুখীন ভাগে ঝুলিয়ে উঠানের শাঝ বরাবর বাঁশটি

মাটি কুপে খাড়া করে রাখল। চৌকাঠে বসে খুলিটার দিকে তাকিয়ে বলল ঃ দুর্ভোগের আর কি বাকী আছে আজ দেখেই তবে উঠব। বিকেলের দিকে

আকাশটা স্বচ্ছ দেখা দিতে রতœা, গোপালকে জাল নিয়ে বের হতে অনুরোধ করল। অনেক বুঝিয়ে সে তাকে বললঃ এইটি আমরা দেখে রাখব। আমাদের

উপর বিশ্বাসটুকু রাখতে পার। গোপাল জাল নিয়ে বের হয়ে যাওয়ার পর রতœা খুলিটাকে নিচে নামিয়ে কুসুমকে বলল ঃ একটি দ্যা নিয়ে আয়। উনি

এই খুলিটা নিয়ে বসে থাকলে তো আর জাল ফেলতে পারবে না। আর জাল না ফেললে মাছ পাবে কোথায় ? আমরা কি খেয়ে থাকব?। কুসুম ও আদুরী

দাড়ীয়ে দাড়ীয়ৈ মায়ের হাতে খুলি ভাঙ্গ দেখে অনেক আনন্দ করল। তাদের আনন্দ দেখে রতœাও মৃদু হেসে বলল ঃ তোদের বাবা এসে কিছু বললে,

এভাবেই তোরা হাসতে থাকবি। তোদের আনন্দ দেখে রাগের পরিবর্তে উনি হাসতে থাকবেন।

গোপালের জালে বিকেলে বেশ মাছ ধরা পড়ল। আবদুর রহিম মুন্সীর বাড়ীতে মাছ নিয়ে আসল। মুন্সী মাছগুলো দেখে অত্যান্ত খুশী চিত্তে একশতটাকার

একটি নোট বের করে গোপালকে দিলেন। গোপাল ভেজা হাতে টাকাটা নিয়ে মুন্সীকে কি যেন বলতে ইস্তত করল। মুন্সী বুঝতে পেরে বলল , কম হয়েছে

নাকি গোপাল? গোপাল বলল ঃ না! মশায়। মুন্সী বলল ঃ তবে কি? গোপাল মাথার খুলির পুরো গল্পটা তার নিকট বলল। মুন্সী বলল যা ঐটি নিয়ে আয়।

খুলির জন্য আরো একশ টাকা দেব। আনন্দ আহ্বলাদে ভেজা জালটি পিঠে রেখে দ্রুত বাড়ী ফিরল গোপাল। তখন ছিল সন্ধ্যা কাছাকাছি সময়। গোপালে

সব আনন্দ বেদনায় পৃষ্ট হয়ে মাথার খুলির ছিন্ন বিচ্ছিন্ন অংশগুলো চোখে ধরা পড়ল। জাল রেখে উঠানে সে বসে পড়ল। আঁধার নেমে আসছে , তার পিছন

হতে জাল নিয়ে রতœা বাঁশের উপর বিছিয়ে দিচ্ছে। আদুরী ও কুসুম বাবার দু’পাশে বসে পড়ল। গোপাল খুলির অংশ বিশেষ জোড়া দেয়ার চেষ্টা করল।

তবু লেখার কোন অংশ বিশেষ পেল না। পুরাপুরি অন্ধকার আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না । গোপাল একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল ঃ লেখাটি যথার্থই ছিল।

মুন্সী গোপালের কাছ থেকে টাকাটা ফেরত পেল। জানল খুলির বিস্তারিত বিবরণ। গোপাল চলে গেল। আবদুর রহিম মুন্সী মাথার খুলিটা দিয়ে বিশ্বের

সমস্ত মুসলিম পরিস্থিতির দুর্ভোগের ব্যাপারটা বিচার করে। যতদিন সকল মুসলিম একমত একপথে না আসবে ততদিন তাদের দুর্ভোগ কপাল থেকে

মুছে যাবে না।

বিষয়: বিবিধ

১২৩৭ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

280279
০১ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৫৫
আফরা লিখেছেন : সকল মুসলিম একমত একপথে আসবেও না তাদের দুর্ভোগ কপাল থেকে যাবে ও না।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File