মাঝ রাতে স্বপ্নে এখনো তুমি কেন যে আসো?

লিখেছেন লিখেছেন সাইফুল সাইমুম০১ ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৮:৩২:৩৯ রাত

একি! তুমি এখনো এইখানে বসে আছো? তোমাকে না কত করে বলেছি’ এটি একবারে অসম্ভব। যা হবার সব হয়ে গেছে, এখন আর কিছুই করা সম্ভব না। তুমি তো নিজেই ভাল নেই, আর আমাকেও যে ভাল থাকতে দিবে না। দয়া করো! বুঝতে চেষ্টা করো। আমিও তো তোমাকে কম ভালবাসিনি? তবে শুধু শুধু পাগলামী করে নিজের জীবনটাকে নষ্টা করে দিও না।

অহিনিশ’ কথা গুলো চেচিয়ে বলল। আমার কোন আওয়াজ ও নড়াচড়া না দেখে সেই অনেক খানি গাবড়ে গেল। তার কাঁধে ঝুলানো ব্যাগটি দুর্বাঘাসের উপর রেখে আমার পাশেই বসে পড়ল। দুই হাত ছুঁয়ে আমার মুখ স্পর্শ করে বললঃ এই তো দেখছি পিরামিড হয়ে যাচ্ছে। এই তরু! তরু! তরু তুমি কথা বলছ না কেন?

তখন গোধুলী ফেরিয়ে অনেকটা সন্ধ্যার আবছা অন্ধকারের অষ্পষ্টতার দেখা মিলল। তরু আমার অহিনিশের ছোট কালে দেওয়া নাম। আমাকে নাকি দেখতে তার কাছে লতার মতই মনে হয়। তার কল্পনা আর বাস্তবকে নাকি আমি লতার মতই জড়িয়ে আছি। প্রতিদিন ভোর ভেজা স্নীº কুয়াশার ঘাস গুলো মাড়িয়ে অহিনিশ আমার খোলাজানালার পাশে এসে মিনিট পাঁচেক দাড়িয়ে থাকে। আমি আমার বইয়ের পাতার বাজ কেটে বাম হাত গালে রেখে ঠেস দিয়ে মুচকি হেসে ধমকে দিয়ে বলি উঠি, এই অহি’ পিছনে ফেরে দেখো, কমলের মা আসছে। অহি খুব ভয় পেয়ে আতকে উঠে বলে ’ মোড টা তো অফ করে দিলি, সাথে সাথে ভিষণœ মন নিয়ে সে চলে যায়। কমলের মা কে অহি’র ভয় পাওয়ার কারণ হচ্ছে তিনি হলো অহি’র ছোট খালা। মাসের তৃতীয় সপ্তাহে সে আমাদের বাড়ীতে বেড়াতে আসে। সপ্তাহ দুই খানেক আগে অহি’ কে ঠিক এইভাবে ঠাঁই দাড়িয়ে থাকতে দেখে বললঃ কি রে অহি ! তুই এই খানে কি করছিস? ভাগ্যিস অহি ঝটপট করে বলে উঠল, তরুর কাছ থেকে কলম নিতে আসছি। লেখার শেষ লাইনটুকুতেই কালি শেষ হয়ে গেল। কমলের মা বলল ঃ তরু আবার কে? অহি বলল ঃ তর্জনী! তর্জনী। কমলের মা অর্থ্যাৎ অহির ছোট খালা অনেকটা যুবতী রং মাখা, তাই তার বুঝতে আর কষ্ট হল না। শাসন জুড়ে উঁচু কন্ঠে বলল ঃ যা ! যা! এখনি যা! আমি তোর কলমের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

আমার বিয়ে হলো প্রায় বছর দশেক হয়ে গেল, আমার একমাত্র সন্তারে বয়স ৯ বছর। এবার ক্লাস ফোরে পড়ে। আমার স্বামী যদিও একটি সরকারী চাকুরী করত। আমার বাবার অঢেল সম্পদ থাকায় রমিজকে কারবারের ব্যবস্থা করে দেয়। আমাদের নিকটবর্তী শহরেই রমিজের ব্যবসার কাজ আছে। আর আমাকে আমার বাবার শহরের একটি ফ্লাটে রেখেছে।

প্রায় দশ বছর পর! শহরের নামিদামী এক কসমেটিক দোকানের সামনে দেখা হয় অহি’র সাথে। আমার ছোট বোন সাহারা ও আমার ছেলে শোভনকে সাথে নিয়ে কেনাকাটার জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু এত অদ্ভুত প্রেম পাগল মানুষ পৃথিবীতে আজো আছে বিধায় প্রেম নামটি মনে হয় এত গভির। সবার সামনে অহি’ আমার হাত দুটো ধরে বলছে’ “মাঝ রাতে স্বপ্নে এখনো তুমি কেন যে আসো?” অহি’ একবারের জন্য ও ভাবল না! আমার সন্তান সব কিছু বুঝে। সাহারা অহিকে অনেক ভাল পায়। তারও গতবছর বিয়ে হয়েছে। হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে তাকে বুঝিয়ে বললাম ঃ কি হয়েছে তোমার?

পাশের একটি ফার্স্টফুডের দোকানে ঢুকলাম। অহি’ বার বার সরি বলল, যেন উম্মাদ এক নব উম্মাদ। সাহারা মিটি মিটি হাসছে। শোভন অহি’র দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বললাম উনি তোমার আঙ্কেল। শোভনের কোন কিছু প্রশ্ন করার আগেই অহি তাকে জড়িয়ে কোলে নেয়। অহি বিয়ে করেছে গত তিন বছর ফেরিয়ে গেল। তার বাবুর নাম নাকি তরুই রেখেছে। কিন্তু ছেলে হলেও তরু বলেই সে ডাকে।

অহি বিষয়টা পরিস্কার করে বলল ঃ রাতে ভাল একটা ঘুম হয় না। যেই টুক ঘুম হয় তাতেও আমি নাকি এসে তাকে ডিস্টাব করি, সে যদিও বা প্রবাসে থাকে ছুটিতে এসেছে ২মাস হল । আবার চলে যাবে, কিছু কেনাকাটার জন্য এই মার্কেটে আসছিল। অর্ডার আমরা দিলেও প্রেমেন্টটা সেই করেছিল। প্রায় ঘন্টাখানেক সময় দিলাম তাকে। দুপুর দুটোয় বাসায় ফিরে গিয়ে রমিজকে অপেক্ষা করতে দেখি। প্রতিদিনের মত হাসি মুখ নিয়ে তার সামনে গিয়ে বসলাম। শোভনও সাহারা সবকিছু বলে দেওয়ার আগেই রমিজকে আমি সব খুলে বললাম। কারণ রমিজকে অহির কথা বাসর রাতেই বলে দিয়েছিলাম। রমিজ ভারি হেসে বলল ঃ যাক বাবা তুমি কারো কারো স্বপ্নে ধরা দিলে দাও কিন্ত মন ও দেহখানি আমার কাছেই রেখো।

আমি অভিমান সুরে বললাম ঃ পুরুষ মানুষগুলোর প্রেম শুধু মনকে নিয়ে নয়, দেহকে ভরেই তাদের যতসব চিন্তা। রমিজ বলল ঃ গিন্নি শুনো নাই, বাংলা ছবির ডায়লগ দেহ চাইল দেহ পাবি, তবুও মন দেব না। যেসব পুরুষ মনের জন্য পাগল তারা আসলে বুদ্ধু। আমি তো বলি দেহ থেকেই মনের সর্ম্পক গড়ে উঠে। আর আমরা যারা ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত তারা মন নিয়ে নাড়া ছড়ার সময় কই। হটাৎ লোডশেডিং এ ইলেক্ট্রিক লাইট অফ হয়ে গেল। রমিজ আমাকে জড়িয়ে ধরতেই আমি চিৎকার করতেই সেই মুখ চেপে ধরে কানের কাছে ফুস ফুস করে বলল ঃ কারো স্বপ্নের মাঝে যেন তুমি না যাও তার ব্যবস্থা এখুনি নিচ্ছি!

বিষয়: বিবিধ

১৩৫৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

273698
১২ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১০:২৫
লোকমান লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
২৭ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০১:০৯
222391
সাইফুল সাইমুম০১ লিখেছেন : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
273699
১২ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১০:৩০
ফেরারী মন লিখেছেন : পুরুষ মানুষগুলোর প্রেম শুধু মনকে নিয়ে নয়, দেহকে ভরেই তাদের যতসব চিন্তা।

টোটালি মিথ্যা কথা।
২৭ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০১:১১
222392
সাইফুল সাইমুম০১ লিখেছেন : আপনার স্ব্তন্ত্র মত থাকবেই, এটি কোন কোন মেয়ের চিন্তা লেখাটিতে সেইটি তুলে ধরা হয়েছে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File