কয়েকটি ইসলামিক প্রশ্ন ও উত্তর-১২
লিখেছেন লিখেছেন কাঁচা পত্তের রস ১২ জুন, ২০১৫, ১০:৩৬:৫৫ রাত
ইসলমিক জীবন আমরা সবাই চাই। তাই জানতে হবে ইসলামিক নিয়ম। আজ ১২তম পর্বে পবিত্র মাহে রমজান মাস উপলক্ষে যে প্রশ্নত্তোর গুলো আমরা দেখব সেগুলো হলো:
১। ফজরের আযান হলেই কি পানাহার বন্ধ করা জরুরী?
২। এক ব্যক্তি ঘুম থেকে উঠে সেহেরী খেল। অতঃপর জানতে পারল যে, তাঁর খাওয়াটা ফজরের আযানের পর হয়েছে। সুতরাং তাঁর রোযা কি শুদ্ধ হবে?
৩। রোযার দিনে দাঁতের মাজন (টুথ-পেস্ট বা পাউডার) ব্যবহার করলে রোযা শুদ্ধ হবে কি?
৪। রমযানের একাধিক রোযা কাযা করতে হলে কি একটানা করা জরুরী?
৫। পরিজনের সাথে এক সঙ্গে রোযা রাখার উদেশ্যে মহিলারা ট্যাবলেট খেয়ে মাসিক বন্ধ রাখতে পারে কি?
৬। রোযা না রাখার নিয়ত করলে এবং তাঁর নিয়ত বাতিল করে দিলে রোযা বাতিল হয়ে যাবে কি?
৭। চোখ বা কানে ঔষধ দিলে কি রোযা ভেঙ্গে যায়?
৮। বমি করলে কি রোযা ভেঙ্গে যায়?
প্রশ্ন: ফজরের আযান হলেই কি পানাহার বন্ধ করা জরুরী?
উত্তর: আযান দেখার বিষয় নয়। দেখার বিষয় হল ফজর উদয়ের সময়। যেমন সময়ের ঘড়িও মজবুত হওয়া প্রয়োজন। নচেৎ মুআযযিন আগে আযান দিলে অথবা ঘড়ি মজবুত ফাস্ট থাকলে যেমন খাওয়া বন্ধ করা বিধেয় নয়, তেমনি মুআযযিন দেরি করে আযান দিলে অথবা ঘড়ি স্লো থাকলে খেয়ে যেতেই থাকা বৈধ নয়। বলা বাহুল্য, এ বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা কর্তব্য। ২৬৭(ইবনে বায)
প্রশ্ন: এক ব্যক্তি ঘুম থেকে উঠে সেহেরী খেল। অতঃপর জানতে পারল যে, তাঁর খাওয়াটা ফজরের আযানের পর হয়েছে। সুতরাং তাঁর রোযা কি শুদ্ধ হবে?
উত্তর: আযান সঠিক সময়ে হয়ে থাকলে এবং সে আযান হয়ে গেছে---এ কথা না জানলে তাঁর রোযা শুদ্ধ। কারণ অজান্তে বা ভুলে অনিচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করে ফেললে রোযার ক্ষতি হয় না। মহানবী (সঃ) বলেছেন, “যে রোযাদার ভুলে গিয়ে পানাহার করে ফেলে, সে যেন তাঁর রোযা পূর্ণ করে নেয়। এ পানাহার তাকে আল্লাহ্ই করিয়েছেন।”২৬৮ (বুখারি ১৯৩৩, মুসলিম ১১৫৫, আবূ দাঊদ ২৩৯৮, তিরমিযী, দারেমী, ইবনে মাজাহ ১৬৭৩, দারাকুত্বনী, বাইহাক্বী ৪/২২৯, আহমাদ ২/৩৯৫, ৪২৫, ৪৯১, ৫১৩ )
আসমা বিন্তে আবী বাকর (রঃ) বলেন, “নবী (সঃ) এর যুগে একদা আমরা মেঘলা দিনে ইফতার করলাম। তারপর সূর্য দেখা গেল।” ২৬৯ (বুখারী ১৯৫৯, আবূ দাঊদ ২৩৫৯, ইবনে মাজাহ ১৬৭৪ নং)
এই অবস্থায় রোযা কাযা করার নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তাঁর মানে রোযা শুদ্ধ।
প্রশ্ন: রোযার দিনে দাঁতের মাজন (টুথ-পেস্ট বা পাউডার) ব্যবহার করলে রোযা শুদ্ধ হবে কি?
উত্তর: রোযার দিনে দাঁতের মাজন (টুথ-পেস্ট বা পাউডার) ব্যবহার না করাই উত্তম। বরং তা রাত্রে এবং ফজরের আগে ব্যবহার করাই উচিৎ। কারণ, মাজনের এমন প্রতিক্রিয়া ও সঞ্চার ক্ষমতা আছে, যার ফলে তা গলা ও পাকস্থলীতে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। অনুরূপ আশঙ্কার ফলেই মহানবী (সঃ) লাকিত্ব বিন সাবরাহকে বলেছিলেন, “(ওযূ করার সময়) তুমি নাকে খুব অতিরঞ্জিতভাবে পানি টেনে নিয়ো না। কিন্তু তোমরা তোমরা রোযা থাকলে নয়।” ২৭৩ (আহমাদ ৪/৩৩, আবূ দাঊদ ১৪২, তিরমিযী, নাসাঈ, সঃ ইবনে মাজাহ ৩২৮ নং)
পক্ষান্তরে নেশাদার ও দেহে অবসন্ন আনায়নকারী মাজন; যেমন, গুল-গুড়াকু প্রভৃতি; যা ব্যবহারের ফলে মাথা ঘোরে অথবা ব্যবহারকারী জ্ঞ্যানশূন্য হয়ে যায়, তা ব্যবহার করা বৈধ নয়; না রোযা অবস্থায় এবং না অন্য সময়। কারণ, তা মহানবী (সঃ) এর এই বানীর আওতাভুক্ত হতে পারে, যাতে তিনি বলেন, “প্রত্যেক মাদকতা আনায়নকারী দ্রব্য হারাম।” ২৭৪ (বুখারী, মুসলিম, সুনানে আরবাআহ, সঃ জামে ৪৫৫০ নং)
প্রশ্ন: রমযানের একাধিক রোযা কাযা করতে হলে কি একটানা করা জরুরী?
উত্তর: একটানা হওয়া জরুরী নয়। কেটে কেটেও রাখা যায়। তবে উত্তম হল একটানা রাখা। ২৬২ (ইবনে জিবরীন)
প্রশ্ন: পরিজনের সাথে এক সঙ্গে রোযা রাখার উদেশ্যে মহিলারা ট্যাবলেট খেয়ে মাসিক বন্ধ রাখতে পারে কি?
উত্তর: মহান আল্লাহ্র দেওয়া এ প্রাকৃতিকে রোধ করলে তাঁর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। মাসিক নিবারক ট্যাবলেট ব্যবহারে মহিলার গর্ভাশয়েরও নানান ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে; যেমন সে কথা ডাক্তারগণ উল্লেখ করে থাকেন। সুতরাং ঔষধ ঐভাবে মাসিক বন্ধ রেখে এবং পবিত্রতা থেকে রোযা রাখে, তাহলে সে রোযা শুদ্ধ ও যথেষ্ট হয়ে যাবে। ২৬১ (ইবনে উষাইমীন)
কেউ রোযা রেখে মারা গেলে তাঁর তরফ থেকে মিসকীন খাওয়াতে হবে, নাকি ওয়ারেসকে রোযা রেখে দিতে হবে?
রমযানের রোযা কাযা রেখে মারা গেলে তাঁর তরফ থেকে মিসকীন খাওয়াতে হবে। আর নযরের রোযা না রেখে মারা গেলে তাঁর তরফ থেকে ওয়ারেসকে রোযাই রাখতে হবে।
আমার মা রমযানের রোযা বাকি রেখে ইন্তিকাল করলে তিনি মা আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি আমার মায়ের তরফ থেকে কাযা করে দেব কি?” আয়েশা (রঃ) বললেন, “না। বরং তাঁর তরফ থেকে প্রত্যেক দিনের পরিবর্তে এক একটি মিসকীনকে অর্ধ সা’ (প্রায় ১ কিলো ২৫০ গ্রাম খাদ্য) সদকাহ করে দাও।” ২৬৩ (ত্বহাবী ৩/১৪২, মুহাল্লা ৭/৮, আহকামুল জানাইয, টীকা ১৭০ পৃঃ)
ইবনে আব্বাস (রঃ) বলেন, “কোন ব্যক্তি রমযান মাসে অসুস্থ হয়ে পড়লে এবং তারপর রোযা না রাখা অবস্থায় মারা গেলে তাঁর তরফ থেকে মিসকীন খাওয়াতে হবে; তাঁর কাযা নেই। পক্ষান্তরে নযরের রোযা বাকী রেখে গেলে তাঁর তরফ থেকে তাঁর অভিভাবক (বা ওয়ারেস) রোযা রাখবে।” ২৬৪ (আবূ দাউদ ২৪০১ প্রমুখ)
প্রশ্ন: রোযা না রাখার নিয়ত করলে এবং তাঁর নিয়ত বাতিল করে দিলে রোযা বাতিল হয়ে যাবে কি?
উত্তর: নিয়ত প্রত্যেক ইবাদত তথা রোযার অন্যতম রুকন। আর সারা দিন সে নিয়ত নিরবচ্ছিন্নভাবে মনে জাগ্রত রাখতে হবে; যাতে রোযাদার রোযা না রাখার বা রোযা বাতিল করার কোন প্রকার দৃঢ় সংকল্প না করে বসে। বলা বাহুল্য, রোযা না রাখার নিয়ত করলে এবং তাঁর নিয়ত বাতিল করে দিলে সারাদিন পানাহার আদি না করে উপবাস করলেও রোযা বাতিল গণ্য হবে। ২৬৫ (দ্রঃ ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৪১২, মুমতে ৬/৩৭৬)
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কিছু খাওয়া অথবা পান করার প্রাথমিক ইচ্ছা পোষণ করার পর ধৈর্য ধরে পানাহার করার ঐ ইচ্ছা বাতিল করে পানাহার করে না, সে ব্যক্তির কেবল রোযা ভাঙ্গার ইচ্ছা পোষণ করার ফলে রোযা নষ্ট হবে না; যতক্ষণ না সে সত্যসত্যই পানাহার করে নেবে। আর এর উদাহরণ সেই ব্যক্তির মত, যে নামাযে কথা বলার ইচ্ছা পোষণ করার পর এক কথা না বলে অথবা নামায পড়তে পড়তে হাওয়া ছাড়ার ইচ্ছা করার পর তা সামলে নিতে পারে। এমন ব্যক্তির যেমন নামায ও ওযু বাতিল নয়, ঠিক তেমনি ঐ রোযাদারের রোযা। ২৬৬ (ইবনে উষাইমীন)
প্রশ্ন: চোখ বা কানে ঔষধ দিলে কি রোযা ভেঙ্গে যায়?
উত্তর: চোখ বা কানে ঔষধ দিলে রোযা ভাঙ্গে না। কারণ চোখ ও কান খাদ্যনালী নয় এবং সে ঔষধও কোন খাবারের কাজ করে না। তবে সন্দেহ হলে তা রাতে ব্যবহার করার পূর্বসতর্কতামূলক কর্ম। ২৭০ (লাহনাহ দায়েমাহ)
প্রশ্ন: বমি করলে কি রোযা ভেঙ্গে যায়?
উত্তর: ইচ্ছাকৃত বমি করলে রোযা নষ্ট হয়ে যায়। মহানবী (সঃ) বলেন, “রোযা অবস্থায় যে ব্যক্তি বমনকে দমন করতে সক্ষম হয় না, তাঁর জন্য কাযা নেই। পক্ষান্তরে যে ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করে, সে যেন ঐ রোযা কাযা করে।” ২৭১ (আহমাদ ২/৪৯৮, আবূ দাঊদ ২৩৮০, তিরমিযী ৭১৬, ইবনে মাজাহ ১৬৭৬, সঃ জামে ৬২৪৩ নং)
উত্তর দিয়েছেন: আব্দুল হামীদ ফাইযী, বাংলা হাদিস (সিয়াম ও রোজা)
পূর্বের পর্বগুলো একসাথে- কয়েকটি ইসলামিক প্রশ্ন ও উত্তর-১১
বিষয়: বিবিধ
২১১৩ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বিবি তালকের ফাতোয়া খুঁজি কোরাণ-হাদীস চষে।
বর্বর ইসলাম সঠিক হলেই কি! বেঠিক হলেই কি? যেখানেই কোরাণ-হাদীস আক্রে ধরা ইসলাম সেখানেই মারামারি, হানাহানি, সন্ত্রাস, জেহাদ, বোমাবাজি, রক্তপাতা, নারী নির্যাতন, বিজ্ঞান বিমুখতা, পিছিয়ে থাকা।
জাপান/সিংগাপুর তা হলে সঠিক ইসলাম ভক্ত, নয় কি??
ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
মেয়েদের ক্লাস ফাইব পর্যন্ত পড়ার নির্দ্দেশদাতা আল্লামা শফি হুজুর ইসলামের কিছুই বুঝেন্না!!!! বোকোহারাম, আইসিস, তালেবান, টিটিপি প্রধান মুফতি ফুজুল্লা, , পাকিস্তানি জেহাদী পাখতুন........ এরা আপনার কাছ থেকে ইসলামের সবক নিবে?? হাহা, হাহা
আমাদের দেশ রোজার সময় অনেক আগে ফজর এর আযান দিয়ে দেওয়া হয় অতি সাবধানতা অবলম্বন করতে গিয়ে। কিন্তু সুবহে সাদিক পর্যন্ত পানাহার করায় দোষ নাই।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে পবিত্র রমজান মাসের ৩০ রোজা সুস্থভাবে করার তৌফিক দান করুন।- আমিন
ধন্যবাদ আপনাকে। ভাল থাকবেন।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে পবিত্র রমজান মাসের ৩০ রোজা সুস্থভাবে করার তৌফিক দান করুন।- আমিন
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে পবিত্র রমজান মাসের ৩০ রোজা সুস্থভাবে করার তৌফিক দান করুন।- আমিন
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে পবিত্র রমজান মাসের ৩০ রোজা সুস্থভাবে করার তৌফিক দান করুন।- আমিন
মাসিকের কারণে মহিলারা রোজা রাখতে না পারাটা একটা নিয়ম যা আল্লাহই দিয়েছেন মহিলাদের । যে কয়টি রাখা গলে না সেগুলো মহিলারা সাধারণত শাওয়াল মাসে রাখে । এই মাসে ৬ টি রোজা রাখার নাকি বিশেষ ফজিলত আছে ।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে পবিত্র রমজান মাসের ৩০ রোজা সুস্থভাবে করার তৌফিক দান করুন।- আমিন
মন্তব্য করতে লগইন করুন