বই মেলা ম্যালা বই
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ অয়েজুল হক ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০১:০৮:২৭ দুপুর
আমাদের দেশে মাসব্যাপী বইমেলা হয়। লেখকরা সারা বছর ধরে যা লেখেন বইমেলার মাধ্যমে তা পাঠকদের সামনে তুলে ধরেন। বইমেলা। খুব সুন্দর একটা আয়োজন। একদিন দু;দিন নয়, মাসব্যাপী। বইমেলার বদলে মাসব্যাপী ফাষ্টফুডের মেলা হলে গিলতে গিলতে আর খেতে খেতে পেট ফেটে মরার আশঙ্কা থাকত। বই পড়ে কেউ মরেনা। পড়তে পড়তে কারও মাথা ফেটে যায়না। গল্প,কবিতা,উপন্যাসের ওভারলোডের কারনে কারও মাথার ঘিলু ছিটকে বেরিয়েও যায়না। বই মনের দুয়ার খুলে দেয়, জ্ঞান চক্ষুর জন্ম দেয়। জ্ঞান চক্ষু কিন্তু যা তা ব্যপার না। সাধারন চক্ষু সবার থাকে, জ্ঞান চক্ষু সবার থাকেনা। সাধারন চক্ষু দিয়ে পানি পড়ে, চক্ষুতে ছানি পড়ে , চোখ কানা হয় কিন্তু জ্ঞান চক্ষুর কিছুই হয়না। ছানি পড়েনা, পানি পড়েনা। যতো বেশি বই পড়া হবে জ্ঞান চক্ষু ততো বেশি প্রখর হবে।
যদিও মাসব্যাপী বইমেলা হয় কিন্তু বই কেনার ব্যপারে আমরা আজও সেকেলে রয়ে গেছি। বইমেলায় প্রচুর দর্শনার্থী বই দর্শন করতে আসেন। আমি ভাবি যারা আসেন তারা সবাই যদি একটা কিছু নিয়ে যেতেন তাহলে ষ্টলের বই শেষ হয়ে ষ্টলের বাঁশ, খুটি, প্যান্ডেলের কাপাড় কিছুই থাকত না। কিন্তু আশ্চার্যভাবে অসংখ্য ভাল ভাল বই থেকে যায়। লেখকদের সুন্দর সুন্দর বই গুলো সুন্দরভাবেই পড়ে থাকে।
ক’বছর আগে মেলায় এক লেখক বন্ধুর সাথে দেখা। উস্কোখুস্কো চুল। মনে হয় অনেকদিন গোসল করেনা। চোখ দুটো লাল। মনে হয় অনেক দিন ঘুমায় না। শরীরটা রুক্ষ। মনে হয় অনেকদিন নিয়ম মতো খাবার খায়না। ওকে দেখে আমার প্রথম কর্তব্য যা তা হলো বইমেলায় প্রকাশিত তার তিনটি বইয়ের খোঁজ নেয়া। সেই হিসাবে প্রশ্ন করে ফেলি, কিরে বই গুলো কেমন চলছে? আমার প্রশ্ন শুনেই লেখক বন্ধু মহোদয় তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন। বইয়ের কি হাত পা আছে! বই কি বাস, গাড়ী না ট্রেন যে চলবে? তাইতো! বুঝতে পারি তার বাকহীন, শক্তিহীন জড়ো বই নিশ্চিতভাবেই ষ্টলে পড়ে আছে। লেখকের ঘুম নেই,খাওয়া নেই, নাওয়া নেই।। পাবলিক যদি বই না কেনে তাহলে কি আর করা যাবে!? বাস ঠেলার মতো আরো জোরে হেঁইয়ো, জোরছে বলো হেঁইয়ো মার্কা স্লোগান তুলে বই পাবলিকের হাতে তুলে দেওয়া যায় না। মুজতবা আলীর কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে এ বুলি আওড়াতে ইচ্ছা হয়, আমি নিজেই প্রডিউসার, নিজেই কাস্টমার। আমি তামাক দিয়ে সিগারেট বানাই, আমি নিজেই খাই। আমি বই লিখি, আমি নিজেই কিনি।
অবশ্য সবার বই যে চলেনা তা নয়। কারও কারও বই চলে। হাস্যেজ্জ্বল চেহারায় ঘুরে বেড়ান চলা বইয়ের লেখকবৃন্দ। তাদের যদি ঐ একই প্রশ্ন করা হয় তারা জবাব দেন- আরে কি যে বলেন! আরে বই তো না রকেট ছেড়েছি। ধুম ধাড়াক্কা ব্যান্ডের মিউজিকের মতো চলছে। প্রথম মুদ্রন শেষ হয়েছে বই মেলার আগেই, দ্বিতীয় মুদ্রন শেষ হয়েছে মেলার দ্বিতীয় দিন। দিনে দিনে মুদ্রন সব শেষ। জানেন লোকজন তো বইটা যে প্রেস থেকে ছাপা হয়েছে সে প্রেসটাই কিনে নিতে চায়। হেঃ হেঃ!
আমি অনেকদিন প্রধানমন্ত্রীর একটি বানী পড়েছি- প্রিয়জনকে বই উপহার দিন। চমৎকার উপদেশ। আমার মনে হয়, প্রিয়জনকে চাইনিজ , ফাষ্টফুড উপহার দিলে সে শুধু বেলুনের মতোই ফুলবে, ফুলে আটার বস্তা হবে। কিন্তু তাকে একটি বই উপহার দিলে সে কিছু শিখবে, সুতরাং প্রিয়জনকে বই উপহার দিন।
বইমেলায় একশ্রেনীর তরুন-তরুনী দেখতে এবং দেখাতে আসে। ঠোটে দু’ইঞ্চি লিপিস্টিক, মুখে পাঁচ ইঞ্চি মেকাপ মেরে হেলেদুলে তরুনীরা ভিড় জমায়। তাই দেখে তরুনের দল ঝাক ধরে বিল্ডিং থেকে নেমে আসে ফিল্ডিং মারতে। কারও উদ্দেশ্য বই কেনা নয়। তবু্ও ভাল। আসতে আসতে একদিন কিনতে শিখবে। সে দিন লিখবো- বই মেলা, ম্যালা বই। ঘরে বাইরে বই। ষ্টলে ষ্টলে নতুন নতুন বই। মানুষের হাতে হাতে বই। বই আর বই।
ছড়ার মতো করে বলি- বই আর বই
তোরা সবাই কই!
চাঁদের আলো দিন-রাত
ঘুম নাই স্বপ্ন দেখ।
কইরে তোরা কই?
দূরে নয়- এবার আকাশের স্বপ্ন গুলো ছুঁয়ে দেই।
আকাশের স্বপ্ন গুলো ছুয়ে দেব- রকমারি লিংক
সম্পদিত গল্প সংকলন- আকাশের স্বপ্ন গুলো ছুঁয়ে দেব
উপন্যাস- চাদের আলো ও দিন রাত
চাদের আলো ও দিন রাত ( রকমারি লিংক)
এছাড়া ও পাওয়া যাচ্ছে একুশে বই মেলাতে বইঘরের 104 নং স্টলে। খুলনা বইমেলা- 59-60 নং বইঘরের স্টলে।null
বিষয়: সাহিত্য
১৪৫৫ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এখন একটি তৃপ্তিকর ঢেকুর।
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর পোষ্টের জন্য।
বই কিনতে আসে না নিজেদেল দেখাতে আসে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন