পথে পথে - ( ধারাবাহিক উপন্যাস ৩ য় পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ অয়েজুল হক ২৭ নভেম্বর, ২০১৪, ০৪:২০:৫২ বিকাল

অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার। গতরাতে প্রচুর বৃষ্টির পর আজ সকালে সূর্য তার পরিপূর্ন রূপ নিয়ে পূর্বাকাশে উদিত হয়েছে। বেশ কয়েকদিন পর সূর্য উঠেছে। অনেক দিন পর আকাশে মেঘ জমলে যেমন ভাল লাগে তেমনি কয়েকদিন টানা বৃষ্টির পর ঝকঝকে আকাশ দেখলেও ভাল লাগে। হোটেল আল ফালাহ্ ইন্টারন্যাশনাল থেকে বের হয় মোকলেস। রাস্তায় পা দিয়ে প্রথম চোখে পড়ে ফুটপাতে কয়েকজন মানুষ ঘুমিয়ে আছে। বন মানুষের মতো চেহারা, নোংরা পোষাক। ঢাকা শহরে এতো টোকাই, পাগল, অসহায় মানুষ কেন থাকে প্রথম দিকে বুঝে আসতো না। কয়েকদিন পথে পথে ঘুরে সামান্য ধারণা পেয়েছে। ঢাকা শহরে ডাস্টবিনের সংখ্যা বেশি এ জন্য ডাস্টবিনের খাবার খাওয়ার মানুষও বেশি। অসহায়রা যায়না, ডাস্টবিন পাবে কোথায়! সুরম্য ভবনের দশতলায় মানুষ থাকে আবার দশতলার নিচে ফুটপাতেও মানুষ থাকে। এ দু’শ্রেণীর মানুষের মাঝে বিশাল এক পার্থক্য। গতরাতে যে রাস্তায় মাজা সমান পানি ছিল এখন সেখানে একবিন্দু পানি নেই। মাজা সমান পানির মাঝখান দিয়ে হাটা একটা মজার ব্যাপার। রাত ন’টার দিকে হোটেলে ফিরছিল মোকলেস। কোথাও হাটুপানি কোথাও মাজা পানি। রাস্তার মাজা পানি ডিঙ্গিয়ে হাজার কর্মব্যাস্ত মানুষ এদিক ওদিক ছুটাছুটি করছে। মোকলেসের বিশ হাত সমনে একজন মানুষ। বগোলে স্যান্ডেল, মাথায় একটা কাপড়ের ব্যাগ। সম্ভাবত অফিস শেষে বাজার করে ঘরে ফিরছে। মোকলেসের একা একা হাটতে ভাল লাগেনা। মাজা পানির মধ্যে দু’জন গল্প করে হাটতে সম্ভাবত ভাল লাগবে। মোকলেস ডাক দেয়, ‘ এই যে ভাই জাস্ট মিনিট।’

মোকলেসের ডাক শুনে লোকটা দাড়ায়। ‘ কিছু বলবেন?’

‘ একা একা হাটতে ভাল লাগছে না। পানির মধ্যেদিয়ে দু’জন মিলে হাটবো। ছলাৎ ছলাৎ শব্দ করে হাটবো। ’

‘ বেশিদূর হাটা যাবেনা সামনেই শুকনা রাস্তা।’ জবাব দেয় লোকটি।

‘ তাহলে তো সমস্যা, বেশিক্ষন আনন্দ করে হাটা যাবেনা।’

‘ পানির মধ্যে হাটাতে আনন্দ আছে নাকি?’

‘ অবশ্যই আনন্দ আছে। চলুন আমরা আবার ব্যাক করি। আবার যাব আবার আসবো।’

‘ আপনি যান।’

‘ কেন আপনি যাবেন না।’

‘ আমি তো আপনার মতো পাগল না। আমি যাব কেন?’

মোকলেস কথা বাড়ায় না। পাগল বলেছে একটু পর ছাগলও বলতে পারে। পনির যে অবস্থা তাতে হাটার চেয়ে সাতার কেটে যাওয়াতে আরও বেশি সুবিধা অথচ সাতার কাটা যাবেনা। সাতার কাটলে লোকজন জড়ো হয়ে হাততালি দেওয়া শুরু করবে। অলিম্পিক গেমসের সাতার দেখতে যতো মানুষ জড়ো হয় তার চাইতেও বেশি মানুষ জড়ো হবে। বিনা টিকিটে রাস্তা, ফুটপাত, অলি-গলি দিয়ে সাতার কেটে যাওয়া একজন মানুষকে দেখবে। মেইন রাস্তা দিয়ে সাতার কাটলে সমস্যা কোথায়! কারওয়ান বাজার থেকে সাতার কেটে যাবে ফার্মগেট। ফার্মগেট থেকে সাতার কেটে কেটে……..’

‘ সরকারের নিকুচি করি।’ হঠাৎ কথা বলে ওঠে মোকলেসের পাশের লোকটি।

‘ কেন সরকার আবার কি করলো?’

‘ কি আর করবে, মাজা পানিতে হাটাচ্ছে। পানি খাওয়াচ্ছে।’

‘ এতে তো ভাই সরকারের হাত নেই, মাবুদের ইচ্ছা।’

‘ আরে রাখেন আপনার বাজে কথা।’

‘ কোথায় রাখবো?’

অনেক সময় পর লোকটা হাসে। হাসতে হাসতে বলে, ‘ ইউরোপ- আমেরিকায় কি বৃষ্টি হয়না, বন্যা হয়না? সে দেশের মানুষ কি আমাদের মতো পানি খায়?’

‘ পানি খাবে কেন ওরা তো টু-ইন টাওয়ারের নিচে চাপা পড়ে মরে। টর্নেডো এসে দু’একটা এলাকা গুড়িয়ে দেয়। মাঝে মাঝে জঙ্গলে আগুন ধরে মাসের পর মাস জঙ্গল পোড়ে। ঘরবাড়ি পুড়ে সাফাসাফা হয়।’

‘ আপনার নাম কি?’

‘ আমার নাম মোকলেস।’

পানিকে ডোবা রাস্তা শেষ হয়। লোকটা স্যান্ডেল পায়ে দিতে দিতে বলে, ‘ উন্নয়ন, উন্নয়নের বছর পূর্তি।’

‘ কেন আপনি উন্নয়ন দেখেন না?’

‘ উন্নয়ন হলে তো দেখবো।’

‘ ভাল লেন্সের চশ্মা লাগান সিনেমা দেখার মতো উন্নয়ন দেখতে পাবেন। চোখের পাতায় উন্নয়নের ছবি ভেসে উঠবে।’

‘ আপনি উন্নয়ন দেখেন কি করে আপনার চোখে তো চশমা নেই।’

‘ আমি ভাই খালি চোখেই উন্নয়ন দেখতে পাই।’

‘ এই সরকারের আমলে উন্নয়নের কি দেখলেন?’

‘ দেখলাম তো অনেক কিছু। দেশকে বদলে দেওয়া হচ্ছে। স্বামীকরন, বাবাকরন, ভাইকরন করা হচ্ছে। স্বাধীনতার পর আমাদের আর কিছু না হোক বদলা বদলির যে উন্নয়ন তা পৃথিবীর যে কোন দেশকে হার মানাবে।’

‘ আমার বাড়ি এদিকে।’

লোকটা ডাইনের রাস্তা ধরে চলে যায়।

বিষয়: সাহিত্য

১২৯০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

288931
২৭ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০৯
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
289851
৩০ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:০২
মোঃ অয়েজুল হক লিখেছেন : ধন্যবাদ প্রিয় ইশতিয়াক আহমেদ ভাই

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File