আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর প্রডাকশন-রিডাকশন থিউরি

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ অয়েজুল হক ০১ অক্টোবর, ২০১৪, ০৫:০০:৩৭ বিকাল

এক জনের বাবা বিছানায় পড়ে আছেন। অসুখ। প্রডাকশন যা দেবার দিয়েছেন।এখন আমেরিকা, সিঙ্গাপুর, ভারত করে বেড়াতে হবে। অনেক সম্পত্তিও তার। ছেলেরা বাবাকে নিয়ে বাবার ব্যাথা বয়ে বেড়ায়। প্রতিবেশী তার অতিদরদী। ছেলেদের বলেন, বয়স কতো?

পচাত্তর।

হাটে?

না।

নড়ে?

না।

প্রডাকশনের সম্ভাবনা আছে?

নাই।

শুধু রিডাকশন!

ছেলেদের রাগ হয়। রিডাকশন মানে!

মানে তার পেছনে শুধু খরচ হচ্ছে?

জ্বি।

আমি এগুলো পছন্দ করিনা। যা শুধু ‍রিডাকশনের প্রডাকশন নাই আমি এগুলোকে পছন্দ করিনা।

তো?

আগাছা পরিস্কার করে ফেলা দরকার।

ছেলেদের রাগের সীমা ছাড়িয়ে যায় ভদ্রবেশী অভদ্র লোকটার দু’গালে দুটো থাপ্পড় বসিয়ে বলে, ভালোবাসার বাবা আমাদের।রিডাকশ আর প্রডাকশন কিরে শয়তান?

হজ বিশ্ব মুসলিম উম্মার এক মিলন মেলা। সাদা-কালো, ধনী-গরিব সকল শ্রেনীর মানুষ যেখানে ভেদাভেদ ভুলে একত্রিত হয়ে বলে - লাব্বাইক। আল্লার হুকুমে আল্লার সামনে এই হাজির হওয়াটা হাজার বছরের ইতিহাস। নবী মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ ( সঃ) এর আগমনের বহু আগে বলা যায় সৃষ্টির সূচনা লগ্ন থেকেই চলে আসছে মুসলিমদের এ পবিত্র মিলন মেলা। পৃথিবীর প্রান্ত প্রান্ত থেকে মানুষ জড়ো হয় হজের সময়। হজের মৌলিক মুল উদ্দেশ্য হলো – কোরবানী। আল্লার জন্য মানুষ তার সম্পদ, সময়, জান-মাল কুরবানী করে ছুটে আসবে দেশ-বিদেশ থেকে। এক প্রান্ত থেকে অন্য পান্তে। আমার জানা নেই একবার হজ করে কোন মানুষ হজের ব্যপারে বিষাদগার করেছে। বরং আমার যতো হাজীদের সাথে পরিচয় – সাবাই একটাই আফসোস করেছেন, আবার যদি যেতে পারি, আর একবার! তাদের ব্যকুলতা উপলদ্ধি করেছি আমি। বুকের কথা। আল্লাহপাক তার পবিত্র ঘর বাইতুল্লাহ(কাবা) ঘরের প্রতি এক দূর্নিবার আকর্ষন, ভালোবাসা দিয়ে দিয়েছেন মানুষের মনে।যারা হজ করেছেন তার জানেন। বাকীদের জানার কথা নয়।

মুসলমানদের দুনিয়ার জীবন পরকালে জান্নাত পাওয়ার একটা সুন্দর লক্ষ্য উদ্দেশ্যে পরিচালিত। জান্নাত তাদের আসল ঠিকানা, যা চিরস্থায়ী। দুনিয়ার সব কিছু ক্ষনস্থায়ী। আজ আছে কাল নেই। আজ ইনি মন্ত্রী তো কাল আরেকজন। আজ একদল ক্ষমতায় তো কাল আরেক দল। প্রতিদিন ঝাকে ঝাকে মানুষ তাদের সব সম্পদ রেখে মাটির নিচে চলে যাচ্ছে।কতো বিত্তশালী, কতো ক্ষমতাধর চলে গেল মাটির নিচে। সম্পদ আর ক্ষমতা তাদের চিরদিন বাচিয়ে রাখতে সাহায্য করেনি।

গত ২৯.০৯.১৪ তারিখ আমাদের ডাক,টেলিযোগাযোগ ও তথ্য যোগাযোগপ্রযুক্তিমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি হোটেলে নিউইয়র্ক টাঙ্গাইল সমিতির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে হজ, নবীজি (সঃ) ও তাবলীগ জামাত নিয়ে কটুক্তি করেছেন- যা সকল মুসলমানদের হৃদয়ে আঘাত হেনেছে। এ জাতীয় কথা তিনি নতুন বলেছেন এমন নয়, এর আগেও বলেছেন। তিনি বলেন-‘আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী। তবে তার চেয়েও হজ ও তাবলিগ জামাতের বেশি বিরোধী।’ বিরোধী কেন এর কারন উল্লেখ করতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন- ‘এ হজে যে কত ম্যানপাওয়ার (জনশক্তি) নষ্ট হয। হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরবে গিয়েছে। এদের কোনো কাম নাই। এদের কোনো প্রডাকশন নাই। শুধু রিডাকশন দিচ্ছে। শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা দিয়ে আসছে।’

এ ব্যপারে অনেক দৃষ্টান্ত দেওয়া যায়। আমি প্রথমেই বলবো – হজ আল্লাহপাকের হুকুম। ব্যাস। মুসলিম হিসাবে এর লাভ-ক্ষতি হিসাব করার আর কোন সুযোগ কোন মুসলমানের থাকেনা। যদি আপনাকে বলা হয় আপনার জীবন কে দিয়েছেন! আপনি নিজে? আপনি যে টাকা-পয়সা উর্পাযন করেছেন আপনার শক্তির উৎস কি! আপনি যে মুখ দিয়ে কথা বলছেন, এ মুখ কি আপনি নিজে বানিয়েছেন? এ প্রশ্নের উত্তর গুলো যদি হয়, না তাহলে লাভ-ক্ষতির হিসাব আর থাকছে না। যার টাকা আছে ( আল্লাহ দিয়েছেন এ বিশ্বাস ধারন করে ) তার টাকা পয়সা গুলো আল্লাহর পথে যদি ব্যায় করেন তো তার ব্যক্তি স্বাধীনতার ব্যাপারে, তার ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর আঘাত করে কথা বলার অধিকার আপনাকে কে দিল?

ইসলাম বাদ দিলাম, দুনিয়াবী যুক্তিতে আসি- একজন মানুষ তার উপার্যিত টাকা দিয়ে দশতলা বাড়ি, এসি ও বিলাসীতার সামগ্রী ক্রয় করলে তার প্রতিবেশী প্রডাকশন-রিডাকশনের হিসাব করার অধিকার সংরক্ষন করেনকি! যদি করেন তো আমাদের হাজার কথা বলার আছে। একবার আমাদের জাতীয় এক দৈনিক পত্রিকায় আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতাদের গাড়ির লিষ্ট ও মূল্য ছাপিয়েছিল। সে সময় ই শতাধিক নেতার এক একটি গাড়ির মূল্য ছিল এক কোটি বিশ লক্ষ টাকার উপরে। চলার জন্য গাড়ি দরকার কোটি টাকার গাড়ি নয়। সামান্য বিলাসিতার জন্য শত শত কোটি টাকার গাড়ি কিনে দেশের টাকা বা্ইরে দেওয়া তো রিডাকশন। ভারতীয় আইডল ভাড়া করে আনার পেছনে যে শত শত কোটি টাকা খরচ করা হয়, হচ্ছে তার প্রোডাকশ কি!

রাজনৈতিক কারনে আব্দুল লতিফ সিদ্দীকি বিরোধী রাজনৈতিক দল জামাতে ইসলামীর সমালোচনা করেন সেটা যদিওবা কোন যুক্তিতে যুক্তি সঙ্গতও হয় কিন্তু পৃথিবীর শত কোটি মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস, অনুভূতিতে আঘাত দেবার কোন অধিকার তার নেই। তার এই দুঃসাহস শত কোটি মানুষের বুকের ভেতরকার লালিত ভালোবাসায় ছুরিকাঘাত করেছে।

দৈনিক পত্রিকায় তার বক্তব্য ছাপা হবার পর অনেক পাঠক অন-লাইনে তাদের বিভিন্ন মন্তব্য পেশ করেছেন। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন- এই যে মন্ত্রীদের এ টুর সে টুর। বিশাল বহর নিয়ে বিদেশ ভ্রমন। এসব ভ্রমন আর টুর দিয়ে দেশের জন্য কি প্রডাকশন নিয়ে আসছেন। শত কোটি টাকা তো খরচ হচ্ছে, আর এ টাকা আপনাদের ব্যক্তিগত অর্জন বা পরিশ্রমের টাকাও নয়, দেশের গন মানুষের টাকা।হজের ব্যপারে প্রডাকশন-রিডাকশনের কথা তোলার আগে তার ভেবে দেখা উচিত ছিল বাংলাদেশের কতো মানুষ সৌদি আরবে কাজ করছে। তাদের উপার্যিত টাকায় চলছে হাজার হাজার বাংলাদেশী পরিবার। হজ এজেন্সির উপর র্নিভর করে কতো মানুষ জীবন চালাচ্ছে। হজ যাত্রী বহন কারী বিমান সংস্থা লাভবান হচ্ছে হজের কারনে। হজকে কেন্দ্র করে আতর, টুপি, বালিশ…. কতো ব্যবসায়ী লাভবান হচ্ছে। আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ তার পরিবারের বহু সদস্য, আওয়ামী লীগের বহু জনপ্রিয় নেতা হজ ও বহুবার ওমরা করেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সহ তার পরিবার ও তার দলের বহু জনপ্রিয় নেতা হজ ও বহুবার ওমরা করেছেন।আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর কথা অনুযায়ী এ সকল জনপ্রিয় ব্যক্তিবর্গের কোন কাজ কাম নাই। এদের কোন প্রডাকশন নাই। শুধু রিডাকশন দিচ্ছে। শুধু যাচ্ছে আর দিয়ে আসছে!!!

ধর্মীয় জ্ঞানের সল্পতার কারনে তিনি যে উদ্ধত্যর্পূন কথা বলেছেন তা শালীনতার সাথে বললে এভাবে বলা যায়- নবী মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ (সঃ) নাকি আরবরা খাবে কি সেজন্য হজ ব্যবসা চালু করে গেছেন!( নাউজুবিল্লাহ) একজন মন্ত্রী সেটাও আবার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষায়ক অথচ হজের ইতিহাস ও তথ্য তার জানা নেই!? হজের হাজার হাজার বছর আগের ইতিহাস যারা নামায রোজা করেনা এমনকি লেখাপড়াও জানেনা এমন সাধারন মানুষও জানে মহানবী মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ (সঃ) এর জন্মের হাজার বছর আগে থেকেই হজের প্রচলন ছিল।

একই মঞ্চে স্ব-বিরোধী বক্তব্য দিলেন দেখুন, বললেন লক্ষ লক্ষ লোক জমা হওয়ার ব্যবসা চালু করে গেলেন। আচ্ছা। আরবরা খাবে কি তাই এ ব্যবসা। ভাল কথা লক্ষ লক্ষ লোক জমা হওয়া যদি ব্যবসা হয় তো তাবলীগ জামাতের বিশ্ব এস্তেমা এক বড় ব্যবসা বাংলাদেশের জন্য। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ এসে জড়ো হয় বাংলাদেশ নামক সবুজের এই দেশে। দেশের অথনীতি চাঙ্গা হয়। মানুষের খাবার ব্যবস্থা হয় ( তার কথা অনুযায়ী) কিন্তু এক্ষেত্রে তিনি কি বললেন!! বলেছেন, ‘তাবলিগ জামাত প্রতিবছর ২০ লাখ লোকের জমায়েত করে। নিজেদের তো কোনো কাজ নেই। সারা দেশের গাড়িঘোড়া তারা বন্ধ করে দেয়।’

তাবলীগ তো কারও সমালোচনা করেনা। আপনার বক্তব্যেরও হয়তো প্রতিবাদ করবে না। তাদের পেছনে লাগলেন কেন! তারা কি মানুষের টাকা চুরি করে না সিদ্দিকীর সাহয্যে চলে? একজন সুস্থ মস্তিস্কের মানুষ কখনো এতো অসংলগ্ন কথা-র্বাতা বলতে পারেনা। তাকে সুস্থ চিত্তের বিবেকবান মানুষ মনে করাটাই অসুস্থ মানুষের লক্ষন।

বিষয়: বিবিধ

১০৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File