ঐ চাঁদ তোমার আমার
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ অয়েজুল হক ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০২:১৪:২৫ রাত
ঈদের চাঁদ ছোট। চাঁদ ছোট
হলে হবে কি ছোট দেখে বড় আনন্দ
পাওয়া যায়। যার ইয়ে আছে তার
তো আনন্দের কোন সীমা নেই।
টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, সুনামগঞ্জ
থেকে সুন্দরবন তার আনন্দ বাংলাদেশ
ময় বিস্তৃত। মনের মাঝে আনন্দের
টর্নেডো, ঘূর্নিঝড়। আনন্দের
ঝড়ো বতাসে প্রেমিক বেচারাদের
পকেটের টাকা ঈদ মার্কেটেই
উড়ে যায়। তাতে কি প্রিয়ার
খিঃ খিঃ ঘিঃ ঘিঃ মার্কা হৃদয়
ছ্যাদা করা হাসি
লাখ টাকার চাইতেও দামী। ঈদের
মাঠে অসহায় মানুষের জন্য, মসজিদের
উন্নয়নের জন্য অনেক সময়
টাকা তোলা হয়। প্রেমিক
বেচারা গুলো পকেটে টাকা চেপে রাখে,
পকেটে তার প্রিয়া।
টাকা না থাকলে প্রিয়া থাকেনা।
দুনিয়া- আখেরাত গোল্লায় যাক
আগে প্রিয়ার সখ আহ্লাদ। অসহায়
না খেয়ে মরুক তাতে কি! ইয়ের জন্য
চাই দামী নেকলেস। ঈদের এক বছর
আগে থেকে প্রোগ্রাম সেট। চাইনিজ
দিয়ে শুরু আমেরিকা দিয়ে শেষ।
মাঝখানে মধুমিতায় একটা সিনেমা,
ফ্যান্টাসি কিংডমটা একটু পরির্দশন,
নন্দন পার্কে চন্দন গাছের
চেয়ারে বসে ঘন্টা খানেক
হাওয়া গেলা তারপর নভোথিয়েটার
এই সব আর কি।
ঈদের দিন কোন রকম নামাজ শেষ
করেই একটা সিগারেট জ্বালায় মারুফ।
বুকের ভেতর খুশি, একবার নামে আবার
ওঠে। সকাল সাকালই আসার
কথা মেয়েটার। মিতা। ওর
সাথে পরিচয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত
শুধু ভাল আর ভাল
লেগেছে মেয়েটাকে। ওর কথা ওর
আচরন……।
সিগারেট টা পুরোপুরি শেষ হয়না ,
মিতা এসে হাজির হয়। লাল
টুকটুকে একটা শাড়ি পরেছে। লাল
রংটা আবার মারুফের অসহ্য। আজকাল
লাল রং দেখলে চমকে ওঠে। মনেহয়
ফিলিস্তিন অথবা ইরাকীদের বুক
ঝরা তাজা রক্ত। চোখের পাতায়
ভেসে ওঠে সম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর
তথাকথিত সন্ত্রাস দমনের চিত্র।
অসহায় মানুষ হত্যার হলিখেলা।
‘ ঐ রিকাশা যাবে?’
একটা রিকশা দেখে হাক দেয় মারুফ।
ড্রাইভার দু’জনের একদম
সামনে এসে ব্রেক করে। দু’জনকে ভাল
করে দেখে। ‘ কই যাইবেন?’
‘ চলো যে দিকে চোখ যায়।’
‘ সে কি কথা!’ রিকশা ড্রাইভার
অবাক হয়।
ঈদের দিন কথা না বড়িয়ে রিকশায়
চেয়ে বসে মারুফ। ‘ ওঠো মিতা।’
রিকশা ড্রাইভারও আর কথা বাড়ায়
না। যায়গায় যায়গায় গরু জবাই হচ্ছে। ‘
খুব গোশ খাওয়া হবে তাইনা মিতা?
আমি গোশ খাব তুমি গোশ খাবে।’
‘ হু’ মিতা ঘাড় নাড়ে।
দিনটা কেমন যেন দ্রুত শেষ হয়,
সন্ধ্যা নামে। পকেটের অবস্থাও করুন।
চাইনিজ শেষ করে কেবল রাস্তায়
নেমে দাড়িয়েছে এমন সময়
সামনে এসে দাড়ায় এক তরুন। ‘ হাই
মিতা।’
‘ হাই।’ মিতা পরিচয় করিয়ে দেয় ‘
আমার খালাতো ভাই রঞ্জন’
‘ ও আচ্ছা, গুড।’
‘ তুমি কি এখন বাড়ি যাবে?’ মিতার
প্রশ্ন শুনে মারুফ অবাক হয়।
‘ কেন?’
‘ আমি এখন রঞ্জনের সাথে একটু
বেরুবো।’
বুকের ভেতর অনেক চাপা কথা, মারুফ
নিরুত্তর। নিরবে দাঁড়িয়ে থাকে।
মিতা চলে যায়। মারুফের সামনে-
পেছনে, বামে-ডানে আরও
কতো কপোত-কপোতী। মারুফ
মিয়া এখন কপোতিহীন।
বিদ্রোহী হয়ে উঠতে ইচ্ছা করে ওর।
ইচছা করে কবিতা আওড়াতে-
নিলর্জ্জ বেহায়া নারীর উল্লাস
যুগ যুগ ধরে ছলনাময়ী নারীর প্রতারনা
আর কতোকাল সইবো
সইতে পারিনা………. না না না……..।
মারুফের পিঠে কারও হাতের
আলতো স্পর্শ অনুভব করে। ‘
কিরে রাস্তার
মাঝখানে দাড়িয়ে হাত পা ছুড়ছিস
কেন?’ মারুফকে রাস্তার মাঝখান
থেকে টেনে একপাশে সরিয়ে আনে মনির
হোসেন। বন্ধু মানুষ।
‘ সামনে ট্রাফিক হবো প্রাকটিস
করছি।’
‘ গুড, নিয়মিত প্রাকটিস কর। ’
‘ মনির মন খারাপ।’
ব্যাঁথা ঝরে মারুফের কন্ঠে।
‘ কেন কি হয়েছে! ঈদের দিন আবার মন
খারাপ কেন?’
‘ মিতা একটা প্রতারক। আমাকে ফতুর
করে খালাতো ভাইয়ের
সাথে ভেগেছে।’
‘ হা হা হা…….’ গগন বিদারী চিৎকার
করে হাসে মনির। বেশ কিছুক্ষন
চলে ওর হাসি। তারপর
হাসি থামিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে, ‘
পাপের পথে সুখ নেই রে বন্ধু।’
‘ আজ জানলাম।’
‘ গুড।’
‘ মারুফ,
পরে কথা হবে আমি একটা জরুরী কাজে যাচ্ছি।’
‘ আল্লাহ হাফিজ।’
মনির আকা বাকা রাস্তা দিয়ে এক
সময় চোখের আড়ালে চলে যায়।
সন্ধা ঘনিভুত হয়েছে। ঢাকা শহরের
রোড লাইট গুলো শহরটাকে আলোকিত
করার আপ্রান
চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অবিরাম। পথ
ধরে হাটতে থাকে মারুফ। রাস্তার
পাশে একটা ছোট শিশু, কাঁদছে। পাঁচ-
ছয় বছর বয়স হতে পারে।
দূরে নোংরা কাপড়ে ফুটপাতে বসে আছে এক
মহিলা। সম্ভাবত শিশুটির মা। মারুফ
ছেলেটির সামনে গিয়ে দাড়ায়, ‘
কিরে কাঁদছিস কেন?’
‘ মা খালি মারে টেকা দেয়না।
দুপুরে কিচ্ছু খাইনি।’
ঈদের দিন কিছু খায়নি! মারুফের বুকের
ভেতর কষ্ট হয়। পকেটের ভেতর হাত
ঢুকায়। একশত টাকা অবশিষ্ট আছে।
বের করে ছেলেটির হাতে দেয়, ‘
নে ভাত কিনে খা গে।’
ছেলেটি হাত বাড়িয়ে টাকাটা নেয়।
ওর চোখে মুখে খুশির ঝিলিক। ‘
খুশি হয়েছিস?’
‘ হ, খুব খুশি হইছি স্যার।’
আকাশে ঈদের চিকন চাঁদ। মারুফ
ছেলেটির হাত ধরে, ‘ আয়
একসাথে গান গাই। ’
‘ কি গান গামু স্যার!’
‘ চাঁদ দেখেছিস, ঈদের চাঁদ?’
‘ হ, ঐ তো আকাশে।’
‘ ঐ চাঁদ ওঠে সবার
মুখে হাসি ফোটাবার জন্য। ধনী-
গরিব সবার। আয় এক সাথে হাসি।’
বিষয়: সাহিত্য
১০৮৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন