শবে বরাত : করণীয় বর্জনীয়

লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ আমিনুল হক ০১ জুন, ২০১৫, ০৫:৪৭:২২ বিকাল

শবে বরাত নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক প্রকার ঝড় বইছে। কেউ পক্ষে কেউ বিপক্ষে। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ঘায়েল করতে অশ্লীল বাক্য বিনিময় করছেন। যা ঠিক নয়। আসুন এ নিয়ে একটু নিরপেক্ষ বিশ্লষণ করি।

শবে বরাত কি: শবে বরাত বলতে আমরা লাইলাতুন নিছফি মিন শাবানকে বুঝি। সালাত, সিয়ামকে আমরা যেমন নামাজ এবং রোযা হিসেবে চিনি ঠিক তেমনি শবে বরাত একটি প্রচলিত পরিভাষা।

হাদীসের এসেছে,

إن الله ليطلع في ليلة النصف من شعبان . فيغفر لجميع خلقه . إلا لمشرك أو مشاحن

অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ শাবান মাসের অর্ধ (১৫ শাবান) রাত্রিতে আসমানে আসেন এবং সকলকে তিনি ক্ষমা করে দেন শুধুমাত্র মুশরিক এবং হিংসুক ব্যাক্তি ছাড়া। (ইবনু মাজা)

উল্লেখিত হাদীসখানা সহীহ বলে প্রমাণিত। এই হাদীসের আলোকে বুঝা যায় এ রাতটি ফজিলতপূর্ণ। এ কারনে এ রাতে নফল বন্দেগী করলে কোন দোষ নেই।

এ রাতে নির্দিষ্ট কোন ইবাদত সাব্যস্ত নেই। ঐ দিন কোন রোযা নেই। নবী স. ১২ মাসই আইয়ামুল বিদ তথা প্রত্যেক আরবী মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ রোযা রাখতেন। শাবান মাস পুরোটাই রোযা রাখার চেষ্টা করতেন। সে হিসেবে কেউ রোযা রাখতে পারেন।

লাইলাতুন নিছফি মিন শাবানের ফজিলত সম্পর্কিত আরো কিছু হাদীস আছে যা দূর্বল বলে বিবেচিত। তারমধ্যে হযরত আয়শা রা. রাসূল স. কে জান্নাতুল বাকীতে সিজদারত পেয়েছিলেন এই হাদিস অন্যতম। যারা শবে বরাতের পক্ষে খুব জোরাল বক্তব্য দেন তারা এই হাদিস বলে থাকেন। তবে এই হাদিসের মর্ম কিন্ত তাদের পক্ষে যায় না। ১৫ শাবানের রাত যদি এতই মর্যাপূর্ণ হবে তাহলে কেন আল্লাহর রাসুল স. উম্মাহাতুল মুমেনীন কিংবা অন্য কাউকে না জানিয়ে একাকী, চুপি চুপি ইবাদত করতে গেলেন?

এই রাতে নফল ইবাদত:

নিজের গুণাহ মাফের মানসে এ রাতে ইস্তেগফার, নফল নামাজ, কুরআন পড়া, জিকির, দুয়া দুরুদ পড়া যেতে পারে। নফল ইবাদত একাকী করা উত্তম। সম্মিলিতভাবে করলে বৈধ হবে তবে তা উত্তম নয় এবং রাসূল স. এর আমলের খেলাফ।

এই রাতে কী করা যাবে না:

এই রাতকে ভাগ্য রজনী বলে বিশ্বাস করা যাবে না। এই রাতে কোন ইবাদত নির্দিষ্ট করে না নেয়া। রুটি হালুয়ার আয়োজন না করা। মাজার, মসজিদ লাইটিং না করা। মাজারে গিয়ে মৃত ব্যক্তির কাছে কিছু না তালাশ করা।

--------------------------------------

মনে রাখবেন, কোন নফল ইবাদত ফরজের সমতুল্য নয়। লাইলাতুল ক্বদর, তাহাজ্জুদ কিংবা ১৫ শাবানের রাতে কোটি রাকাত নামাজ পড়া হলেো তা এক রাকাত ফরজের সমান হবে না।

----------

যারা এ রাতকে পালন করতে চান সহীহ কায়দায় করার চেষ্টা করুন। কোন শিরক, বিদয়াত যেন মিশ্রিত না হয়। এ রাতের আসল শিক্ষা হল, শিরক মুক্ত এবং হিংসা মুক্ত থাকা।

------------

আর যারা এই রাতকে পালন না করতে চান তাকে নিয়ে যেন আমরা টানাটানি না করি। নফল নিয়ে বাড়াবাড়ি ইসলাম পছন্দ করে না। ঐ সাহাবীর কথা খেয়াল করুন যিনি রাসূল স. কে নামাজ, রোযা, হজ্জ, যাকাত সম্পর্কে প্রশ্ন করার পর আল্লাহর রাসূল ফরজ গুলো বলেছিলেন। তিনি বার বার জিজ্ঞেস করছিলেন এর চাইতে আর কিছু আছে কিনা। যখন রাসুল স. বলছিলেন, না। তখন তিনি বলেছিলেন, আল্লাহর শপথ আমি এর চাইতে আর বাড়াবোনা আর কমাবোনা। তিনি প্রস্থান করলে রাসূল স. তার প্রতি ইশারা করে বলেছিলেন, উনি সত্য বলে থাকলে জান্নাতি.....

(আমরা নফল নিয়ে যেভাবে উদগ্রীব সেভাবে ফরজ নিয়ে উদগ্রীব হলে আমাদের এত দূর্দশা হত না। আমাদের ছেলে-মেয়েরা বুড়া-বুড়ি হয়ে যায় তারপরো বলি, পড়ালেখা শেষ করে নিক তার পর দেখা যাবে....যাকাত, হজ্জ, মসজিদে গিয় পাচ অক্ত নামাজ আদায়, পর্দা নিয়ে অতটা মাথা ব্যথা নেই আমাদের..........)

আল্লাহ সবাইকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।

বিষয়: বিবিধ

১৩৭৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

324044
০২ জুন ২০১৫ সকাল ১০:২৮
মু নূরনবী লিখেছেন : ঠিক বলেছেন।

ধন্যবাদ।
324102
০২ জুন ২০১৫ দুপুর ০২:৩৩
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : ভাল লেগেছে আপনার লেখাটি, আশা করি আরো লিখবেন । ধন্যবাদ আপনাকে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File