অবরুদ্ধ গাজাবাসী !! নীরব বিশ্ববিবেক পর্ব-৩
লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নবুনি ৩১ অক্টোবর, ২০১৪, ১০:২৩:৩৩ সকাল
পূর্ব প্রকাশের পর.............
ইসরাইলের অন্যতম সাবেক প্রধানমন্ত্রী গোলদামায়ার ১৯৬৯ সালে সানডে টাইমস পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফিলিস্তিনিদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে এমনও উক্তি করেছিলেন যে, ফিলিস্তিন বলে কখনো কিছুই ছিল না। এমন কোন কিছুর কোন প্রকার অস্তিত্বই নাকি ছিল না। (সানডে টাইমস)
ইতিহাসের পথ পরিক্রমায় ২৩ শে এপ্রিল ২০১৪ ফিলিস্তিনে ঐক্যমত্যের সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। রামি হামদাল্লাহকে অর্ন্তবর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী করে ২রা জুন গঠিত ঐক্যমত্যের সরকার। যা ইসরাইল মোটেও ভালোভাবে নেয়নি। এমনকি ঐক্যমত্যের সরকারের সাথে কাজ করার ঘোষণা দেওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করে ইসরাইল। (রয়েটার্স)
সেই থেকে সুযোগ খুজতে থাকে নতুন করে ফিলিস্তিনে হামলার। বিশ্লেষকদের মতে নীক নকশা হিসেবে ইসরাইল তিন কিশোর অপহরণ ও হত্যা নাটক সাজায়। আর দায় চাপায় ফিলিস্তিনের গাজার উপর। এতে মোহাম্মাদ আবু খদোইর নামে এক কিশোরকে ধরে নিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করে ইসরাইল। এখানে থেমে যায়নি বর্বর ইসরাইল। শুরু করে পৈচাশিক নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। বিমান হামলা, স্থল হামলা ও নৌ হামলার মাধ্যমে ফিলিস্তিনের গাজায় নির্বিচারে মানুষ হত্যা শুরু করে ইসরাইল। এই হামলার উদ্দেশ্য হিসাবে তিন কিশোর হত্যার প্রতিশোধ বলা হলেও ইসরাইল প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর মুখ দিয়ে বের হয়ে যায় মূল উদ্দেশ্য। ১৮ জুলাই সংসদে তিনি বলেন- হামাসের সঙ্গে যেমন যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্ভব নয়, তেমনি শুধু বিমান হামলা চালিয়ে তাদের সুড়ঙ্গ গুলো দখলে নেওয়া সম্ভব নয়। (ওয়াশিংটন পোস্ট)
পরবর্তীতে সাংবাদিকদের বলেন-“ (ফিলিস্তিনে) আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠাই আমাদের লক্ষ্য”। (আল জাজিরা)
ইসরাইল কর্তৃক ফিলিস্তিনে হামলার প্রতীকী নাম দেওয়া হয় “অপারেশন প্রোটেকটিভ এডজ” যা শুরু হয় ৭জুলাই মধ্যরাত বা ৮ জুলাই থেকে। স্মরণকালের সবচেয়ে জঘন্যতম নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে এই অভিযানে ইসরাইল। স্বয়ং ইসরাইল ও ফিলিস্তিনে এত নিষ্ঠুরভাবে হত্যাকান্ড ঘটায়নি ইতোপূর্বে। এবারের অভিযানে মুল টার্গেট ছিল নারী ও শিশু। যদিও জাতিসংঘের নীতি বিরোধী তবুও সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে নারী ও শিশুরা। অভিযান শুরুর প্রথম ৩০ দিনে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যারমধ্যে প্রায় ৭০০ নারী ও শিশু। বর্ণনাতীত নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে নারী ও শিশুরা। ইসরাইলি মানবাধিকার কর্মীর বরাত দিয়ে জেরুজালেম পোস্ট লিখেছে- “নারী ও শিশুদের ধরে নিয়ে অমানবিক ভাবে নিষ্ঠুর নির্যাতন করে, গালিগালাজ করতে করতে নারী আসক্ত ও মদ্যপি ইসরাইল সেনাবাহিনী তাদেরকে হত্যা করেছে”। শিশুদের হত্যার সময় বলা হচ্ছে মেরে ফেলো এই ছা’গুলো যেন জঙ্গি না হতে পারে। যেন ইসরাইলের কোন স্বার্থে আঘাত দিতে না পারে। যেন স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন না দেখে। যেন ইসরাইল বিদ্বেষী না হতে পারে। নারীদের হত্যা করা হয় আরো নৃশংসভাবে। নারীদের হত্যার সময় তাদের স্তন কেটে ফেলা হয়। জরায়ুগুলো নির্লজ্জের মত খুচিয়ে খুচিয়ে নারীদের মারা হয়। আর বলা হয় এই জরায়ু জঙ্গি জন্ম দিয়েছে। এই জরায়ু ইসরাইল বিদ্বেষী জন্ম দিয়েছে। কুমারী মেয়েদের জরায়ু কর্তন করা হয় আর বলা হয় এই জরায়ূ যেন কোন ইসরাইল বিদ্বেষী জন্ম না দেয়। এটা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে সভ্য দাবীদার সেনাবাহিনীর কার্যকলাপ।
নির্যাতনের স্টিমরুলার ফিলিস্তিনিদের উপর সর্বোচ্চ পৈচাশিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, বিশ্ব সভ্যতা এ ব্যাপারে খুব বেশি পদক্ষেপ নেয়নি। যার প্রতিদান বিশ্ববাসীকে দিতে হতে পারে। এই ইসরাইল একদিন সারা বিশ্বের জন্য হুমকি হতে পারে সময়ের ব্যবধানে। ইসরাইলি হামলায় পশ্চিমা বিশ্ব দায়সারা গোছের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সারা বিশ্বে নিরাপত্তার ইজারাদার যুক্তরাষ্ট্র নিন্দা জানালেও পরোক্ষভাবে ইসরাইলকে সমর্থন দিয়েছে। আরো আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী অনেক রাষ্ট্র নিরব থেকেছে।
বর্তমান পরিস্থিতির নেপথ্যে কি কি কারণ রয়েছে? একটি কারণ হল- “আরব পিচ ইনিশিয়েটিভ” প্রায় এক দশক প্রানান্তকর কাজ করেও ইসরাইল প্রশ্নে উপসাগরীয় দেশগুলোর সুনির্দিষ্ট কোন অবস্থান গড়ে তুলতে না পারায় হতাশা। আরব দেশগুলোর নিষ্ক্রীয় থাকার আরেকটি কারণ হল- এসব দেশের শাসকেরা কিছু অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমস্যায় পড়েছেন, তাদের নিজেদের জনগণকে নিয়েও অব্যাহতভাবে সতর্ক থাকতে হচ্ছে।
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
৯৬২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন