আসুন বিশ্বের সেরা ১০ টি ব্যাটল ট্যাংক এর সাথে পরিচিত হই (ছবি ব্লগ)
লিখেছেন লিখেছেন জহুরুল ২২ অক্টোবর, ২০১৪, ০৯:০০:৩৮ সকাল
যুদ্ধের রাজা ট্যাংক, ছোট বেলা থেকেই জেনে এসেছি । কিন্তু কখনো জানা হয়নি রাজাদের রাজা কে ? সেই রাজাদের খুজে বের করতেই আজকের এই প্রচেষ্টা।
১.M1A2 Abrams (USA) :
ক্যান জানি এই ট্যাংকটারে আমার খুব ভাল্লাগে । পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা ট্যাংক গুলোর একটি । ১৯৮৮ সাল থেকে তৈরি হওয়া এই ট্যাংক গুলোর নাম করন করা হয়েছিল General Greigton Abrams থেকে । এই ট্যাংক বর্তমানে USA(1500+),Kuwait(218),Saudi Arabia(373) এই তিনটি দেশে রয়েছে । M1A2 সুরক্ষা ব্যবস্থায় ইউরেনিয়াম মেশ ব্যবহার করা হয়েছে যেটা তাকে নিরাপদ করে তুলেছে । কিন্তু যেসব M1A2 কুয়েত ও সৌদি সেনা বাহিনীতে রপ্তানি করা হয়েছে সেগুলোতে এই ইউরেনিয়াম মেশ দেওয়া হয়নি । হান্টার কিলার সিরিজের এই ট্যাংকটিতে রয়েছে ১ টি 120 mm smoothbore Main Gun ও ৩ টি Machine Gun । 1500 hp multi fuel gas terbain ইঞ্জিনের এই ট্যাংকটির ওজন 62.5 ton । ৪ জন ক্রু নিয়ে সর্বোচ্চ 67 km/h স্পিডে একটানা 425 km পর্যন্ত যেতে পারে । কিছু কিছু M1A2 তে লেজার গাইডেড মিসাইল গুলোকে সনাক্ত ও তাদের নেটওয়ার্ককে জ্যাম করার ব্যবস্থা থাকে ।এই ট্যাংক বিখ্যাত হইল তার নিখুঁত লক্ষ্যভেদ,বিধ্বংসী ফায়ার পাওয়ার,নিজস্ব বর্ম ব্যবস্থা আর সহজ ম্যানুভারএবিলিটির জন্য । সবচেয়ে আশ্চর্যের খবর হল যে কোন প্রতিকূল পরিবেশে এই ট্যাংকের ইঞ্জিন রিপ্লেসড করা যায় মাত্র ৩০ মিনিটে । সাধে কি আর এইটারে 3rd Gen MBT(Main Battle Tank) কয় ? মাগার সামনের বছরেই এইটার 4th Gen M1A3 বের হইতাছে ।
২.Leopard2A7 (Germany) :
Leopard2A7 সর্ব প্রথম বের হয় ২০১০ সালে যেটা ছিল Leopard2A6 এর উন্নত সংস্করণ । এটাকে প্রধানত তৈরি করা হয়েছিল urban warefare ও conventional military operation এর জন্য । 120 mm smoothbore Main Gun সংযুক্ত এই ট্যাংকের ওজন 67.5 ton যেখানে ৪ জন ক্রু বসতে পারে । সাথে আরো ২ টা Machine Gun আছে যেগুলো হল 12.7 mm ও 7.62 mm । এই বার যদি ইঞ্জিনের চিপা গলিতে ঘোরাঘুরি করা যায় তাহলে জানা যায়, এটার ইঞ্জিন পাওয়ার হল 1500 hp, যেইটার oil ট্যাংকি ভইরা দিলে একটানা 450 km পর্যন্ত যাইব 72 km/h স্পিডে ।এই ট্যাংকের সামনে একটা ডযের ব্লেড আছে যেটা দিয়ে তার পথের সকল বাধা সরিয়ে এগোতে পারে । ২০১১ সালে সৌদি আরব জার্মানির কাছ থেকে ২০০ Leopard2A7 কিনে নেয় ( বুঝলাম না, সৌদি এত ট্যাংক দিয়া করে কি ? )
৩. Challanger 2 (UK):
Challanger 2 প্রধানত Chieftain MBT এর সাথে কম্বাইন্ড করে ব্রিটিশ আর্মির জন্য বানানো হয়েছিল । এটি সম্মুখ যুদ্ধে শত্রুদের বেশ ভাল রকমের প্রতিরোধ করে থাকে । এটাকে বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত ট্যাংক বলা হয়ে থাকে । পুরো ট্যাংকটি Chobham Composite Armor দিয়ে ঢাকা । এখানে আছে 120 mm rifled Main Gun যা দিয়ে 4 km দূর পর্যন্ত নিখুঁত ভাবে লক্ষ্যভেদ করা যায় । ব্যাকআপ হিসেবে ২ টা Machine Gun তো আছেই । Challanger 2 এর মেশিনারীজ এর সাথে M1A1 Abrams ও Leclerc MBT এর মিল রয়েছে । ৪ জন ক্রু নিয়ে এটি সর্বোচ্চ 55 km/h ছুটতে পারে ।এটি বিখ্যাত তার যান্ত্রিক নির্ভরতার কারনে । বর্তমানে এটি UK(386) ও Oman Army(38) তে কমিশনড আছে ।
৪.K2 Black Panther (South Korea):
সাউথ কোরিয়ান বিজ্ঞানীদের গবেষণায় ১৯৯৫ সাল থেকে K সিরিজের তৃতীয় প্রজন্মের ট্যাংক K2 Black Panther । চীন বা নর্থ কোরিয়ার যে কোন ট্যাংকের চেয়ে এই K2 অনেক উন্নত । নিজস্ব সুরক্ষা ব্যবস্থায় এখানে আছে Explosive Reactive Armor(ERA) যা আমেরিকান M1A2 Abrams এর সাথে তুলনীয় । ২ টি machine Gun সহ এখানে আছে latest german 120 mm Main Gun যা দিয়ে সর্বোচ্চ 4km পর্যন্ত ফায়ারিং করা যায় । Advance Fire Controler এর সাহায্যে এই ট্যাংক নিজ থেকেই কাছা কাছি দূরতের যে কোন যানবাহন ও তুলনামূলক নিচ দিয়ে উড়ে যাওয়া হেলিকপ্টারকে ফালায়া দেওয়ার সামর্থ্য রাখে । যদিও এই ট্যাংক এখনও মিলিটারী সার্ভিসে অফিসিয়ালি রিলিজ হয় নাই তবুও আশা করা যায় ২০১৪ র মার্চে এই ট্যাংকের রেগুলার দেখা পাওয়া যাবে ।এই ট্যাংকের টেকনলজি ব্যবহার করে তুরস্ক সেনাবাহিনীতে তৈরি হচ্ছে A1tay MBT ।
৫.Merkava MK4 (Israel) :
এটা ইসরাঈলী একটা ট্যাংক । অন্যান্য দেশ গুলোর ট্যাংকের ইঞ্জিন থাকে পেছনের দিকে আর এরা সামনের দিকে ফ্রন্ট মাউন্টেড ইঞ্জিন বসায়া দিছে । আর ঠিক এই কারনেই এই ট্যাংক ক্রুদের সেফটি বাড়ছে বহুগুনে । সকল Merkava সিরিজের ট্যাংক গুলো যুদ্ধাবস্থায় মালামাল ও সৈন্য পরিবহনে সক্ষম । অন্য দেশের ট্যাংক গুলোতে যেখানে ৩-৪ ক্রু এর বেশি বসার কোন ব্যবস্থাই নাই সেখানে এই ট্যাংকে অ্যামুনিশন আনলোড অবস্থায় ১০ জন পর্যন্ত সৈন্য বহন করা যায় । Main Gun হিসেবে 120mm smoothbore ছাড়াও ১টি ATGW (Anti Tank Guided Missiles Weapons) ও ২ টি Machine Gun আছে । ৩৬০ টার মত এই মাল ইসারাইল বানায়া রাখলেও ১ টা মালও তারা অন্য দেশের কাছে বেচব না বইলা নোটিশ ঝুলায়া রাখসে ।
৬. TK-X (Japan) :
জাপানের সবচেয়ে হালকা ও উন্নত প্রযুক্তির ট্যাংক এই TK-X । মাত্র ৪৪ টন ওজনের এই MBT গুলো স্ট্যান্ডার্ড কমার্শিয়াল ট্রেইলার দিয়ে স্থানান্তর করা যায় । এর মেইন কনট্রাক্টর হল মিতসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ । অন্যান্য ট্যাংকের মতোই এটায় আছে 120 mm smoothbore মেইনগান ও দুটো মেশিনগান । নিজস্ব সুরক্ষার ব্যবস্থার কথা বলতে গেলে তুলনা করা যায় জার্মানির Leopard 2A5 ও ফ্রান্সের Leclerc এর সাথে । ২০১২ সালে জাপানী সেনা বাহিনীতে এমন ১৩ টি ট্যাংক অন্তর্ভুক্ত করা হয় । আর এই ট্যাংক গুলো শুধু জাপানের হাতেই থাকবে কারণ জাপানের আইন অনুযায়ী সামরিক যন্ত্রাদি রপ্তানি করা যায় না ।
৭. Leclrec (France) :
১৯৯১ সাল থেকে GIAT ইন্ডাস্ট্রিজ এর মাধ্যমে তৈরি হওয়া Leclrec এর নাম করন করা হয় ফ্রেঞ্চ আর্মির জেনারেল Philip Jacques Leclerc এর নাম অনুসারে । হান্টার কিলার সিরিজের এই ট্যাংকটিকে সুরক্ষিত করে রাখে স্টিল,সিরামিক আর কেভলার এর মিশ্রণে তৈরি আর্মার । ১ টা মেইন গান সহ ২ টা মেশিন গান ফিট করা আছে । এই ট্যাংকের একটা আরবান ভার্সন আছে যেটা Leclerc AZUR নামে পরিচিত । এটা দিয়ে যূদ্ধ করা ছাড়াও রিকভারি ও ইঞ্জিনিয়ারিং ভেহিকল ও ট্রেইনিং ট্যাংক হিসেবে ব্যাবহার করা হয় । এখন পর্যন্ত ফ্রান্সের কাছে এই ট্যাংক আছে ৪০৮ টি আর আরব আমিরাতের কাছে আছে ৩৮৮ টি ।
৮.T-90 MS Tagil (Russia) :
রাশিয়ার এখন পর্যন্ত সবচেয়ে মানসম্মত ট্যাংক যেটা বিশ্ব বাজারে কমার্শিয়ালি সবচেয়ে জনপ্রিয় । যদিও এটা পশ্চিমা দেশের ট্যাংক গুলোর মত এত উন্নত নয় তবুও এটিতে দরকারি সকল প্রকার টেকনোলজির উপস্থিতি দেখা যায় এবং এটার খরচ সব দিক দিয়ে খুবই কম ।লং রেঞ্জ টার্গেটে তেমন একটা কার্যক্ষম না হলেও স্বল্প দূরতের ক্ষেত্রে পুরাই ১ নাম্বার । একটা করে মেইনগান ও মেশিনগান থাকার পরেও এটায় আছে একটা ATGW(anti tank guided missiles weapon) যেটার সাহায্যে ৪-৫ কিঃ মিঃ এর মধ্যে যে কোন যানবাহন এমনকি নীচ দিয়ে উড়ে যাওয়া হেলিকপ্টার ধ্বংস করতে পারে । এটি পানির ভেতর দিয়ে ৫ মিটার গভীরতায় খুব সহজে চলাফেরা করতে পারে । বর্তমানে এই ট্যাংক গুলো আছে রাশিয়া (৭০০), ভারত(৬২০), আলজেরিয়া(৩০৫), আজারবাইন(২০), তুর্কিমেনিস্তান(৪০) ও ভেনেজুয়েলায় (৫০-১০০) ।
৯.Oplot-M(Ukraine) :
Oplpt-M হল Oplot সিরিজের T-84 এর আধুনিক সংস্করন যেটা ২০০৯ সালে সীমিত আকারে উৎপাদন শুরু হয় । সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হবার পরেই ইউক্রেইন এর গবেষণা শুরু করে, যদিও ২-৩ টা অমিল বাদে পুরা ট্যাংকটাকে রাশিয়ান T-90 MS Tagil এর কার্বন কপি বলা যায় । যে কয়েকটা অমিলের কারণে একে সেরা দশে নিয়ে আসা হয়েছে সে গুলো হল- ট্যাংকটিতে Nozh-2 আর্মর লাগানো রয়েছে যা tandem warhead থেকে একে রক্ষা করে থাকে । একটি 125 mm মেইনগান, ২ টি মেশিনগান ছাড়াও এটায় আছে শক্তিশালী Atg সিস্টেম । এখন পর্যন্ত এই সিরিজের মাত্র ১০ টি ট্যাংক আছে ওই দেশের সেনাবাহিনীতে ।
১০. Type-99 (China) :
যদি সেরা ১০ টি ট্যাংকের মধ্যে রেস লাগানো হইত তাহলে ১ নং জায়গাটা দখল করত এই চাইনিজ মালটা । অন্যান্য ট্যাংক গুলো যেখানে ৫৫-৭২ km/h স্পিডে ছুটে সেখানে এই মাল ছুটে ৮০ km/h স্পিডে ।রাশিয়ান আর পশ্চিমা দেশের ট্যাংক গুলোর ডিজাইন ও প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে এই ট্যাংক বানানো হয়েছে । এইটার সুরক্ষা ব্যবস্থা পুরাইটাই জার্মানির Leopard 2A5 এর মত । এটার 125mm মেইনগান হুবুহু কপি করা হয়েছে রাশিয়ান ডিজাইন থেকে যদিও মেশিনগান দুইটা নিজেরাই ডিজাইন করেছে । Atg সিস্টেমটার সাথে রাশিয়ান T-90 এর Atg সামঞ্জস্য রয়েছে । এটার ইউনিক লেজার প্রটেকশন সিস্টেম অন্য ট্যাংক বা হেলিকপ্টার এর Atg কে বাধা দিয়ে থাকে । এক একটি ট্যাংকের উচ্চ মুল্যের কারণে চিনে এখন মাত্র ২০০ টি এই সিরিজের ট্যাংক অপারেশনাল আছে ।
অনেক তো কইলাম বিদেশি ট্যাংকের গুন গান । আয়েন দেহি এই বার আমাগো দেশি ট্যাংকের লগে মোলাকাত করি ।
MBT-2000 (Bangladesh) :
কয়েক মাস আগে চীন থেকে ৪৪ টি MBT-2000 ট্যাংক আমদানী করে বাংলাদেশ । এই সিরিজের ট্যাংক চীন ও পাকিস্তান আলাদা ভাবে তৈরি করে থাকে । পাকিস্তানে এই ট্যাংকের নাম আল খালিদ । ডিজাইনের দিক থেকে এই ট্যাংকটি রাশিয়ান ও পশ্চিমা দেশের ট্যাংক গুলোর চেয়ে সাইজে ছোট । মাগার এই ছোট ট্যাঙ্কেও আছে 125mm মেইনগান, ২ টা মেশিনগান আর স্মোক গ্রেনেড লাঞ্চার । ৪৬ টন ওজনের এই ট্যাংক সর্বচ্চো 70 km/h স্পিডে ছুটতে পারে ।১২০০ hp ডিজেল ইঞ্জিন নিয়ে একটানা ৫০০ km পর্যন্ত যেতে পারে । পানি পথে সর্বচ্চো ৫ মিটার গভীরতায় এই ট্যাংক চলাচল করে । সুরক্ষার জন্য এতে আছে কম্পজিট ও এক্সপ্লোসিভ রিআক্টিভ আর্মর । বর্তমানে বাংলাদেশসহ শ্রীলংকা, মরক্কো ও পাকিস্তানে এই সিরিজের ট্যাংক অপারেশনাল রয়েছে ।
মূল লেখক
বিষয়: আন্তর্জাতিক
২০১৭ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভাল থাকবেন। ধন্যবাদ।
যুদ্ধ এর মধ্যে যেমন ধর হালারে, মার হালারে, খাইয়ালা হালারপো-রে ব্যবহার যেমন স্বাভাবিক বিষয়; যুদ্ধ বিষয়ক পোষ্টে হালা ব্যবহারও খুবই স্বাভাবিক বিষয়! যুদ্ধের মাল মশল্লা ঘর বা রূপ সাজানোর জন্য হবে না! এইটা অলওয়েজ হালার-পোলাদের মারনের জন্য!
তাই আমার মতে জহরুল ভাই ‘হালারা’ ব্যবহার করে সেরকম একটা ভাব নিয়ে এসেছে যা এই পোষ্টের ভাব বাড়িয়ে দিয়েছে ...
মারেকভার বিশেষত্ব সতেৃয় এটির বড় দুর্বলতা আছে। রি্য্যাকটিভ আর্মার ব্যবহার করায় সাধারন ভাবে ফিলিস্তিনি রকেট প্রপেলড গ্রেনেড থেকে নিরাপদ মনে করা হতো। কিন্তু বিশেষ ধরনের ডবল ওয়ারহেড রকেট দিয়ে এটাকে আক্রমন করলে রি্য্যাকটিভ আর্মার টাই বিস্ফোরিত হয়!!
এম-১ এরও দুর্বলতা হচ্ছে অতিরিক্ত কম্পিউটার নির্ভররতা! যেটা ইরাক যুদ্ধের সময় ধরা পরেছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন