২য় পর্ব : পার্ল হারবার আক্রমণ

লিখেছেন লিখেছেন জহুরুল ২১ অক্টোবর, ২০১৪, ০৮:৩৫:৪৪ সকাল



ফোর্ড আইল্যাণ্ডের হ্যাঙ্গারটি বিমানসহ পুড়ছে

প্রথম পর্বের পর

প্রত্যাশিত যুদ্ধ

১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর থেকে জাপান কর্তৃক সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনা যেমন: ইউএসএস প্যানে'র উপর আক্রমণ এবং নানকিং গণহত্যার (২ লক্ষাধিক বাছবিচারহীন হত্যাকান্ড) ঘটনায় পশ্চিমের দেশগুলোয় প্রকাশ্যে জনমতের ফলে সৃষ্ট জাপান বিরোধী আন্দোলন প্রকটভাবে দানা বেঁধে ওঠে। জাপানের অন্য রাজ্য গ্রাস ও অধিগ্রহণে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রসমূহের অভ্যন্তরে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে চীনের অনুরোধক্রমে ও যুদ্ধের জন্য ঋণ সহায়তা সরবরাহ চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স একত্রিত হয়।[১২]

১৯৪০ সালে জাপান ফরাসি ইন্দোচীন জোরপূর্বক ও অন্যায়ভাবে সামরিক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে অধিগ্রহণ করে। এর ফলে তারা চীনে সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালায়। জাপানের এই অবন্ধুত্বসূলভ আচরণের প্রেক্ষাপটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উড়োজাহাজ ও মেশিনের যন্ত্রাংশ, পেট্রোলিয়ামজাতীয় তরল পদার্থ ইত্যাদি জাপানে প্রেরণের উদ্দেশ্যে জাহাজ বোঝাই করার উপর স্থগিতাদেশ প্রদান করে। সেপ্টেম্বরে লোহা ও স্টীলের পাত রপ্তানীর উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করার ঘোষণা দেয়া হলে জাপানের রাষ্ট্রদূত হোরিনাউচি ৮ অক্টোবর, ১৯৪০ সালে সেক্রেটারী হালের কাছে তীব্রভাবে প্রতিবাদ ব্যক্ত করেন এবং হুশিয়ার বাণী উচ্চারণ করেন যে, এর ফলে তা হবে অবন্ধুত্বসূলভ আচরণ।[১৩] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানে তৈল রপ্তানী বন্ধ করতে পারেনি। ঐ সময়ে ওয়াশিংটন মানবীয় দৃষ্টিকোণ ও ভাব-আবেগ নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে তৈল রপ্তানী বন্ধ করার মতো চরম পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়। এছাড়াও মার্কিন তেল আমদানীর উপর বহুলাংশেই জাপানের নির্ভরশীলতা ছিল।[১৪][১৫]

১৯৪১ সালের প্রথমদিকে প্রেসিডেন্ট ফ্রাংকলিন ডি. রুজভেল্ট স্যান ডিয়েগো থেকে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে প্রশান্ত মহাসাগরীয় রণতরী স্থানান্তর করেন। এছাড়াও তিনি দূরপ্রাচ্যে জাপানী আগ্রসনকে নিরুৎসাহিত ও দমিয়ে রাখতে ফিলিপাইনে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি তৈরি করার নির্দেশ দেন। কারণ জাপানের হাই কমান্ড ভুলক্রমে যদি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ব্রিটিশ উপনিবেশগুলোতে আক্রমণ করে ফেলে, তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধের দিকে অগ্রসর হবে। একটি ব্যাপক বিধ্বংসী আক্রমণ মোকাবিলা করার একমাত্র উপায়ই হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর মাধ্যমে সরাসরি হস্তক্ষেপ করা।[১৬] ফিলিপাইনে আক্রমণ করাও ছিল জাপানীদের যুদ্ধ পরিকল্পনা অংশের অন্যতম বিবেচ্য বিষয়। মার্কিন যুদ্ধ পরিকল্পনা অরেঞ্জ ফিলিপাইনের প্রতিরক্ষাকল্পে চল্লিশ হাজার দক্ষ ও অভিজাত বাহিনীর সদস্য নিয়োগ করে। এ পরিকল্পনার বিপক্ষ মতামত ব্যক্ত করেন ফিলিপাইনের ফিল্ড মার্শাল ডগলাস ম্যাকআর্থার। তিনি মত প্রকাশ করেছিলেন যে, মোতায়েনকৃত সদস্যদের পরিবর্তে ১০গুণ বেশি সদস্য প্রয়োজন এবং কাজটি বাস্তবায়ন করা সহজসাধ্য হবে না।[১৭] ১৯৪১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিশ্লেষক ও পরিকল্পনাকারীগণ ফিলিপাইনে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়া শীর্ষক অধ্যাদেশ জারি করেন। এছাড়াও ১৯৪১ সালের শেষ দিকে এশিয়াটিক রণতরীর কমান্ডোর এ্যাডমিরাল থমাসের উপর এবিষয়ে দায়িত্বভার অর্পণ করা হয়।[১৮]

ফ্রান্স পতনের প্রেক্ষাপটে ফরাসি ইন্দোচীনে জাপানীরা আক্রমণ করে। এ আগ্রাসনের প্রতিবাদে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের জুলাইতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানে জ্বালানী তৈল রপ্তানি স্থগিত রাখে। এছাড়াও নতুন অভ্যন্তরীণ জ্বালানী তৈল বণ্টন নীতিও এজন্যে দায়ী।[১৯] ফলশ্রুতিতে জাপানীরা নিজেদেরকে টিকিয়ে রাখতে তৈলসমৃদ্ধ ডাচ উপনিবেশ হিসেবে ইস্ট ইণ্ডিজ দখলের পরিকল্পনা করে।[২০] তারা চীন থেকে নিজ সৈন্যবাহিনী প্রত্যাহার করে এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর নিয়ন্ত্রণাধীন প্রাকৃতিক সম্পদসমৃদ্ধ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উপনিবেশ দখলে ব্যাপক মনোনিবেশ ঘটায়।

(সূত্র উইকি)

বিষয়: আন্তর্জাতিক

১৩৪৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

276618
২১ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৮:৪২
বুড়া মিয়া লিখেছেন : ভালো লাগলো
276621
২১ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৮:৪৫
জহুরুল লিখেছেন : পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ বুড়া ভাই।
276646
২১ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১০:২৬
ঘাড় তেড়া লিখেছেন : নতুন অনেক কিছু জানলাম তাই পিলাচ ও অনেক ধন্যবাদ।
২১ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১৮
220797
জহুরুল লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকেSurprised

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File