চতুর্থ পর্ব : আধুনিক বিশ্ব বনাম পারমানবিক অস্ত্র
লিখেছেন লিখেছেন জহুরুল ০৭ অক্টোবর, ২০১৪, ০৭:০৩:৫৪ সন্ধ্যা
২য় বিশ্ব যুদ্ধের সময় আমেরিকা যে নাগাসিকাতে বোমা ফেলেছিল সেই নাগাসিকার ইতিহাস।
১৫৪৩ সালে নাগাসাকি দ্বীপটিতে প্রথম ইউরোপীয় হিসেবে পর্তুগীজদের পা পড়ে। ১৮৫৯ সালে নাগাসাকিকে উন্মুক্ত বন্দর হিসেবে ঘোষনা করা হয়। বন্দর নগরী নাগাসাকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গুরুত্বপূর্ণ নগর হিসেবে পরিনত হয়। কারণ, এই দ্বীপটিতেই জাপানের রাজকীয় নৌবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ জাহাজ নির্মাণ কারখানা ছিল। ১৯৪৫ সালের ৯ই আগষ্ট সকাল ১১:০২ মিনিটে মার্কিন বিমান বাহিনীর একটি বিমান থেকে ফ্যাটম্যান নামের পারমারনবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয়। যার ফলে শহরটি সম্পূর্ণ ধ্বসীভূত হয় এবং ধারণা করা হয়, ৭০ হাজারের বেশি লোক নিহত হয়েছে। নাগাসাকি কর্তৃপক্ষের হিসেবে মৃতের সংখ্যা ছিল ৭৩,৮৮৪ জন। যাদের মধ্যে ২০০০ হাজার জন কোরিয়ান শ্রমিক ছিল।Click this link
২য় বিশ্বযুদ্ধ শুরু
যুদ্ধের ইতিহাসে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় মাত্র দুটি পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরিত করা হয়েছিল। লিটল বয় নামের প্রথম বোমাটি ৬ আগস্ট ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমাতে এবং ফ্যাট ম্যান নামক দ্বিতীয় বোমাটি তিনদিন পর জাপানের নাগাসাকিতে নিক্ষেপ করা হয়। কিন্তু এর ফলাফল ছিল ভয়াবহ। প্রচণ্ড বিস্ফোরন ও ক্ষতিকর আলোক-কণা বিকিরণের কারণে তাৎক্ষণিকভাবে মারা গিয়েছিল প্রায় ১২০,০০০ লোক এবং আয়নাইজিংয়ের ফলে ধীরে ধীরে আরো অসংখ্য মানুষ মারা গিয়েছিল। এ বোমার বিস্ফোরন এবং কোন দেশের অস্ত্রভান্ডারে এ বোমার সংরক্ষণ খুবই বিতর্কিত একটি বিষয়।
সম্পৃক্ত দেশসমূহ।
হিরোশিমা ও নাগাসাকির সেই বিস্ফোরনের পরেও এখন পর্যন্ত আরও পাঁচ শতাধিকবার পরীক্ষামূলকভাবে এবং প্রদর্শনের জন্য এ বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। বর্তমানে পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরন ঘটিয়েছে এবং মজুদ রয়েছে এমন দেশগুলো হল - যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, ভারত ও পাকিস্তান। এছাড়া এটা ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে - উত্তর কোরিয়া, ইরান, ইসরাইলেও পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে।Click this link
লক্ষ্যস্থল
বোমা নির্মাণের প্রয়োজনীয় উপকরণাদির অপর্যাপ্ততায় বেশ কয়েকমাস বিলম্ব হয়। এ বিলম্বের ফলে ইউরোপ নিশ্চিত যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে যায়। বিকল্প লক্ষ্য হিসেবে ধীরে ধীরে জার্মানি থেকে জাপানের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়। ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের পর ককুরা শহরকে লক্ষ্যস্থল করা হয়। কিন্তু আকাশ জুড়ে মেঘ জমে থাকায় বিকল্প লক্ষ্যস্থল হিসেবে নাগাসাকিকে নির্ধারণ করা হয়।
বক্সকার নামীয় বি-২৯ বোমারু বিমানের সাহায্যে ফ্যাট ম্যানকে বহন করা হয়। ৩৯৩ডি বোম্ব স্কোয়াড্রনের মেজর চার্লস সুইনে বিমানটির পাইলট ছিলেন। জাপানের স্থানীয় সময় সকাল ১১:০২ ঘটিকায় ১,৬৫০ ফুট উঁচু থেকে বোমাটি নিক্ষেপ করেন। এর ক্ষমতা ছিল ৮৮ টেরাজুল বা ২১ কিলোটন টিএনটি।[৪] পার্ল হারবার আক্রমণে ব্যবহৃত টাইপ ৯১ টর্পেডোর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মিতসুবিশি-উরাকামি অস্ত্র কারখানাটি বিস্ফোরণের পর ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল।[৫]
ফলাফল
আকাশ মেঘে ঢাকা থাকার ফলে সঠিকভাবে লক্ষ্যস্থল নির্ধারণ করা যায়নি। ফলে বোমাটি কেন্দ্রস্থল বিচ্যুত হয় এবং হিরোশিমার তুলনায় কম ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আনুমানি ঊনচল্লিশ হাজার লোক ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এছাড়াও পঁচিশ হাজার লোক আঘাতপ্রাপ্ত হন।[৬] বিস্ফোরণ ও অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাজারো লোক পরবর্তীতে মারা যান। তেজষ্ক্রিয়তার প্রভাবে শত শত লোক আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। নাগাসাকিতে এ নিহত হবার ঘটনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তৃতীয় সর্বোচ্চ।[৭] এর পূর্বে রয়েছে হিরোশিমা[৮][৯][১০][১১] ও ৯/১০ মার্চ, ১৯৪৫ তারিখে সংঘটিত টোকিওতে বোমাবর্ষণ।[১২]
Click this link
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য
Infobox collage for WWII.PNG
ঘড়ির কাঁটা ধরে উপর থেকে বামদিকে: ওয়েনজিয়ালিঙের যুদ্ধে চীনা সেনাবাহিনী, প্রথম আল আলামাইনের যুদ্ধে অস্ট্রেলীয় ২৫ পাউন্ডার কামানের ব্যবহার, ১৯৪৩-৪৪ শীতকালীন মৌসুমে পূর্ব রণাঙ্গনে জার্মান স্টুকা বোমারু বিমান, লিঙ্গাইন উপসাগরে মার্কিন রণতরী, ভিলহেল্ম কাইটেল আত্মসমর্পন-চুক্তিতে সাক্ষর করছেন, স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধে সোভিয়েত সেনা
সময়কাল ১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ (1939-09-01) – ২ সেপ্টেম্বর ১৯৪৫ (1945-09-02) (7000600000000000000৬ বছর, 7000100000000000000১ দিন)
অবস্থান ইউরোপ, প্রশান্ত মহাসাগর, আটলান্টিক মহাসাগর, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, চীন, মধ্যপ্রাচ্য, ভূমধ্যসাগর এবং আফ্রিকা, এছাড়াও উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা
ফলাফল মিত্রশক্তির বিজয়
* তৃতীয় রাইখের বিলোপ
* জাপানি ও ইতালীয় সাম্রাজ্যের পতন
* জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা
* পরাশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্থান
* স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা (অন্যান্য...).
বিবদমান পক্ষ
মিত্রশক্তি
সোভিয়েত ইউনিয়ন[lower-alpha ১]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাজ্য
চীন[lower-alpha ২]
তৃতীয় ফরাসি প্রজাতন্ত্র[lower-alpha ৩]
পোল্যান্ড
কানাডা
অস্ট্রেলিয়া
গ্রিস
নেদারল্যান্ডস
বেলজিয়াম
ইয়ুগোস্লাভিয়া
দক্ষিণ আফ্রিকা
নিউজিল্যান্ড
নরওয়ে
চেকোস্লোভাকিয়া [lower-alpha ৪]
ইথিওপিয়া [lower-alpha ৫]
ব্রাজিল
ডেনমার্ক[lower-alpha ৬]
লুক্সেমবুর্গ
কুবা
মেক্সিকো
খাতক ও তল্পীবাহক রাষ্ট্র:
ভারত
ফিলিপাইন
মঙ্গোলিয়া
অক্ষশক্তি
জার্মানি
জাপান[lower-alpha ৭]
ইতালি[lower-alpha ৮]
হাঙ্গেরি
রোমানিয়া
বুলগেরিয়া
সহযোগী শক্তি:
ফিনল্যান্ড
থাইল্যান্ড
ইরাক
খাতক ও তল্পীবাহক রাষ্ট্র:
ক্রোয়েশিয়া
স্লোভাকিয়া
আলবেনিয়া
Japan's Greater East Asia
Co-Prosperity Sphere puppets
মাঞ্চুকুয়ো
চীন-নানজিং
মেংজিয়াং
ফিলিপাইন
বার্মা
আজাদ হিন্দ
নেতৃত্ব প্রদানকারী
মিত্রশক্তির নেতৃবৃন্দ
সোভিয়েত ইউনিয়ন ইওসিফ স্তালিন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট
যুক্তরাজ্য উইনস্টন চার্চিল
চীন প্রজাতন্ত্র (১৯১২-১৯৪৯) চিয়াং কাই-শেক
অক্ষশক্তির নেতৃবৃন্দ
নাৎসি জার্মানি আডলফ হিটলার
জাপানের সাম্রাজ্য হিরোহিতো
ইতালির রাজত্ব (১৮৬১–১৯৪৬) বেনিতো মুসোলিনি
প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি
সামরিক প্রাণহানি:
১,৬০,০০,০০০-এর বেশি
বেসামরিক প্রাণহানি:
৪,৫০,০০,০০০-এর বেশি
সর্বমোট প্রাণহানি:
৬,১০,০০,০০০-এর বেশি (১৯৩৭–৪৫)
...আরও দেখুন সামরিক প্রাণহানি:
৮০,০০,০০-এর বেশি
বেসামরিক প্রাণহানি:
৪০,০০,০০০-এর বেশি
সর্বমোট প্রাণহানি:
১,২০,০০,০০০-এর বেশি (১৯৩৭–৪৫)
প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
তৃতীয় পর্ব
বিষয়: আন্তর্জাতিক
১৫৯৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন